মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে বিজ্ঞানীরা একটি বিশাল ম্যাগমা স্তরের সন্ধান পেয়েছেন, যা সম্ভবত এই অঞ্চলের একটি বৃহৎ আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাইস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নতুন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষকরা পার্কের ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩.৮ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত একটি ‘ম্যাগমা ক্যাপ’-এর সন্ধান পেয়েছেন। এই স্তরটি অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং অস্থির ম্যাগমা দ্বারা গঠিত, যা অনেকটা একটি ঢাকনার মতো কাজ করে। এটি ভূগর্ভের তাপ ও চাপকে আটকে রাখতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইয়েলোস্টোন আগ্নেয়গিরির ম্যাগমা ভাণ্ডার স্থিতিশীল অবস্থায় গ্যাস নির্গত করছে, যা অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
গবেষকরা নিয়ন্ত্রিত সোর্স সিসমিক ইমেজিং এবং অত্যাধুনিক কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে, শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে ভূগর্ভের গঠন এবং উপাদান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। গবেষণার প্রধান, ব্র্যান্ডন স্কমান্ডট, জানিয়েছেন যে, তাঁরা ম্যাগমা ভাণ্ডারের উপরের সীমানার গঠন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন।
তাঁদের আবিষ্কারে দেখা গেছে, এই ভাণ্ডারটি এখনো সক্রিয় রয়েছে, যদিও এটি কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে সেখানে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
গবেষক দলের সদস্য চেংলং ডুয়ান বলেন, তাঁরা ম্যাগমা ভাণ্ডারের উপরের অংশের একটি স্পষ্ট চিত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর মতে, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রচলিত পদ্ধতিতে সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কাঠামোগত সিসমিক ইমেজিংকে আরও উন্নত করা।
এই গবেষণার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা ম্যাগমা ভাণ্ডারের গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন এবং ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সম্পর্কিত ঝুঁকির পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবেন।
আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, ম্যাগমা স্তরে গ্যাসের বুদবুদ এবং গলিত শিলার উপস্থিতি রয়েছে, তবে সেগুলি সাধারণত আসন্ন অগ্ন্যুৎপাতের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে কম। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা ‘শ্বাস-প্রশ্বাস’-এর মতো, যেখানে বুদবুদগুলো ধীরে ধীরে ওঠে এবং শিলার ছিদ্রগুলির মধ্যে দিয়ে নির্গত হয়। এটি একটি প্রাকৃতিক চাপ-মুক্তি প্রক্রিয়া, যা অগ্ন্যুৎপাতের ঝুঁকি হ্রাস করে।
ভূ-বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা ভবিষ্যতে আগ্নেয়গিরি এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এর ফলে, দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া এবং মানুষের জীবন রক্ষার জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।
তথ্য সূত্র: পিপল