শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে উদ্বেগে বিশ্ব।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে আবারও দরপতন দেখা দিয়েছে। দুই দিনের উত্থানের পর বৃহস্পতিবার বাজারে এই মন্দা দেখা যায়। এর মূল কারণ হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানির আয় কমে যাওয়া এবং মার্কিন বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তাকে দায়ী করা হচ্ছে।
বিশেষ করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
বৃহস্পতিবার বাজারের শুরুতে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ০.১ শতাংশ কমে যায়, ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ০.৩ শতাংশ এবং নাসডাক সূচক ০.১ শতাংশ নিচে নেমে আসে। মূলত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিয়ে তার আগের কঠোর সমালোচনা থেকে সরে আসায় এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে কিছুটা নরম সুর প্রয়োগ করায়, গত দুই দিন ধরে বাজারে সামান্য উত্থান দেখা গিয়েছিল।
তবে, বাজারের এই অস্থিরতার প্রধান কারণ হল বিভিন্ন কোম্পানির আয় কমে যাওয়া। পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি পেপসিকো তাদের মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়েছে।
কারণ হিসেবে শুল্ক বৃদ্ধি এবং ভোক্তাদের ব্যয় কমার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে পেপসিকোর মতো পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
অন্যদিকে, সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সও তাদের মুনাফা পূর্বাভাস কমাতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে তাদের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ কমে যায়। এর আগে, ডেল্টা এয়ারলাইন্সও একই ধরনের উদ্বেগের কারণে ২০২৫ সালের জন্য তাদের পূর্বাভাস বাতিল করে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের নীতির কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। মিজুহো ব্যাংকের এশিয়া ও ওশেনিয়া ট্রেজারি বিভাগের তান জিং ই সতর্ক করে বলেন, “আশা ও উদ্বেগের মধ্যে দোদুল্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
এদিকে, ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভ প্রধানকে বরখাস্ত করার কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানানোর পর বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ, ফেডারেল রিজার্ভ একটি স্বাধীন সংস্থা এবং রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে তারা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্বার্থে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের নমনীয় মনোভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার পর ট্রাম্প শুল্ক কমাবেন।
ইউরোপের বাজারেও মন্দা দেখা গেছে। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ এবং জার্মানির ডিএএক্স সূচক ০.২ শতাংশ কমেছে। ব্রিটেনের এফটিএসই ১০০ সূচক ০.১ শতাংশ কমেছে।
তবে, এশিয়ার বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ০.৫ শতাংশ বেড়ে ৩৫,০৩৯.১৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৭,৯৬৮.২০ পয়েন্টে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ০.১ শতাংশ কমে ২,৫২২.৩৩ পয়েন্টে, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ০.৭ শতাংশ কমে ২১,৯০৯.৭৬ পয়েন্টে এবং সাংহাই কম্পোজিট সূচক সামান্য বেড়ে ৩,২৯৭.২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
জ্বালানি বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ০.৭৪ ডলার বেড়ে ৬৩.০১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ০.৭০ ডলার বেড়ে ৬৫.৮৮ ডলারে পৌঁছেছে।
এছাড়া, মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর কমেছে এবং ইউরোর দাম বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন হবে, তা এখন দেখার বিষয়। বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের শেয়ার বাজার এবং বাণিজ্য খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস