পুরুষদের জন্য নতুন গর্ভনিরোধক: দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর, গবেষণায় প্রমাণ
পুরুষদের জন্য একটি নতুন ধরনের গর্ভনিরোধক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে, যা অন্তত দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকতে পারে। ‘অ্যাডাম’ নামের এই গর্ভনিরোধক পদ্ধতিটি হরমোন-নিরপেক্ষ এবং এটি শরীরে স্থাপনযোগ্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় এর কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ‘কন্ট্রালিন’ নামক একটি কোম্পানি। তারা জানাচ্ছে, ‘অ্যাডাম’ একটি জল-দ্রবণীয় হাইড্রোজেল, যা শুক্রনালীতে স্থাপন করা হয়। এর কাজ হলো শুক্রাণুকে বীর্যের সাথে মিশতে বাধা দেওয়া। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কনডম এবং পুরুষদের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণের (ভাসেক্টমি) একটি বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কোম্পানিটি আরও দাবি করছে, নির্দিষ্ট সময় পর হাইড্রোজেলটি শরীর ভেঙে ফেলবে, ফলে পুরুষের স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতা ফিরে আসবে।
গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের ফলাফল পাওয়া গেছে, তাদের শুক্রাণু নিঃসরণ সফলভাবে ২৪ মাস পর্যন্ত বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে এই পদ্ধতি। এই সময়ের মধ্যে তাদের বীর্যে কোনো শুক্রাণু পাওয়া যায়নি। কন্ট্রালিন জানিয়েছে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়নি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল এমন একটি গর্ভনিরোধক তৈরি করা যা দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছি এবং প্রাথমিক তথ্য সেটির প্রমাণ দিচ্ছে।
তিনি আরও জানান, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ২৫ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন এবং তাদের আরও ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
এই পদ্ধতিটি খুবই সামান্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে, স্থানীয় অ্যানেস্থেশিয়ার অধীনে প্রায় ১০ মিনিটের মধ্যে স্থাপন করা যায়। আইজেনফ্রাটস আরও উল্লেখ করেছেন, অন্যান্য কিছু ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতিতে এমন উপাদান ব্যবহার করা হতো যা সহজে শরীর থেকে অপসারণ করা যেত না। ফলে, প্রজনন ক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা কম ছিল এবং শুক্রনালীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে স্থায়ী বন্ধ্যাত্বেরও ঝুঁকি ছিল।
যদিও ‘অ্যাডাম’-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এখনো কোনো বিজ্ঞানসম্মত জার্নালে প্রকাশিত হয়নি, তবে আইজেনফ্রাটস জানিয়েছেন, হাইড্রোজেলের আয়ুষ্কাল আগে থেকেই ধারণা করা যায় এবং প্রাণীদেহে পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে এটি সময়ের সাথে ভেঙে যায়।
এই মুহূর্তে, পুরুষরা চাইলে দুই বছর পর নতুন ইমপ্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কন্ট্রালিন ভবিষ্যতে ‘অন-ডিমান্ড রিভার্সাল’-এর (প্রয়োজন অনুযায়ী অপসারণ) একটি পদ্ধতি তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া, পুরুষরা বাড়িতে বসেই পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারবেন গর্ভনিরোধকটি কার্যকর আছে কিনা।
কন্ট্রালিন জানাচ্ছে, তারা এই বছর অস্ট্রেলিয়ায় ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
এ বিষয়ে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হরমোন-বিষয়ক পুরুষ গর্ভনিরোধক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিচার্ড অ্যান্ডারসন এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই পদ্ধতি যে কাজ করছে, তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।”
তবে, তিনি এবং ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন ওটলি এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘অ্যাডাম’ ইমপ্ল্যান্টের অপসারণযোগ্যতা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। অধ্যাপক ওটলি আরও মনে করেন, পুরুষদের জন্য বড়ি, প্যাচ বা ইনজেকশনের তুলনায় অস্ত্রোপচার একটি কঠিন বিকল্প হতে পারে।
বর্তমানে, বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এই নতুন গর্ভনিরোধক পদ্ধতিটি যদি সফল হয়, তবে এটি পুরুষদের জন্য একটি কার্যকরী এবং দীর্ঘমেয়াদী বিকল্প হতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian