মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেডারেল তহবিল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তের জেরে শিক্ষাব্যবস্থা এবং গবেষণা খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, যেখানে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, ফেডারেল সরকারের এই পদক্ষেপ বেআইনি এবং এটি তাদের স্বাধীনতা খর্ব করছে।
হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের গবেষণা কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যা চিকিৎসা, প্রকৌশল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে অগ্রগতিতে বাধা দেবে। মামলায় আরও বলা হয়েছে, সরকার তাদের একাডেমিক স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ এবং জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যৌথভাবে হার্ভার্ডকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা তাদের ‘বৌদ্ধিক ও নাগরিক অধিকার’ রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, সরকারের কিছু দাবি, যেমন – বর্ণবাদ দূর করার চেষ্টা, তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য, তবে অধিকাংশ দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বৌদ্ধিক পরিবেশের’ উপর সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।
শুধু হার্ভার্ডই নয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল ফান্ড স্থগিত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে অ্যান্টি-সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করেছে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ট্রান্সজেন্ডার নারীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ায় প্রায় ১৭৫ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল স্থগিত করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফেডারেল সরকারের তহবিল বন্ধ হয়ে গেলে গবেষণা, শিক্ষকতা এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অংকের অনুদান (endowment) রয়েছে, যা তারা জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করতে পারে। হার্ভার্ডের প্রায় ৫৩.২ বিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল অনুদান তহবিল রয়েছে, যা অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি।
তবে, এই অনুদানগুলো সব সময় সব কাজে ব্যবহার করা যায় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন বিকল্প অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অনুদান বাড়ানো।
তবে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এই কৌশলগুলো অবলম্বন করা সম্ভব নাও হতে পারে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে সরকারের কিছু শর্ত মেনে নিয়েছে এবং ক্যাম্পাসে নতুন নীতি চালু করেছে।
এই পরিস্থিতিতে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা এবং তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা