আইভারমেকটিন: সহজলভ্য হলেও কতটা কার্যকর?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজ্যে এখন প্রেসক্রিপশন ছাড়াও আইভারমেকটিন ঔষধটি কেনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই ঔষধটি আসলে কী কাজে লাগে?

সম্প্রতি, ইদাহো, আরকানসাস এবং টেনেসী রাজ্যে এই ঔষধটি ওভার-দ্য-কাউন্টার বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সাধারণত, এই ধরনের সিদ্ধান্ত ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের, বিশেষ করে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর নেওয়ার কথা, কিন্তু এখানে রাজ্য সরকারগুলি সরাসরি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

আইভারমেকটিন মূলত পরজীবী সংক্রমণ, যেমন – কৃমি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। মানুষের ব্যবহারের জন্য এর দুটি প্রধান রূপ বিদ্যমান।

একটি হল ট্যাবলেট, যা অন্ত্রের strongyloidiasis এবং onchocerciasis-এর মতো পরজীবী সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য এফডিএ দ্বারা অনুমোদিত। Strongyloidiasis হলে ত্বকের মাধ্যমে কৃমি শরীরে প্রবেশ করে এবং ফুসফুস ও অন্ত্রে বংশবৃদ্ধি করে।

এর ফলে হজম, শ্বাসকষ্ট এবং ত্বকের সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে, onchocerciasis বা রিভার ব্লাইন্ডনেস নামক রোগটি infected blackflies-এর কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়, যা চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করে অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

এছাড়াও, আইভারমেকটিন ক্রিম আকারেও পাওয়া যায়, যা মাথার উকুন এবং rosacea-র মতো ত্বকের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়।

তবে, আইভারমেকটিন শুধু মানুষের চিকিৎসার জন্য নয়, পশুদের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। কুকুর ও বিড়ালের হার্টওয়ার্ম প্রতিরোধের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও, গরু ও ঘোড়ার মতো বড় আকারের পশুদের পরজীবী সংক্রমণ সারাতেও এটি কার্যকরী।

কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে, এই ঔষধটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল। কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে, আইভারমেকটিন ভাইরাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

যদিও এটি অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ নয়, তবুও কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালানো হয়। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আইভারমেকটিন কোভিড-১৯ এর গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে পারে না।

এমনকি উচ্চমাত্রায় প্রয়োগ করেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইভারমেকটিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পেশী দুর্বলতা, জয়েন্টে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, মলের সাথে রক্ত যাওয়া, মাথা ঘোরা, তন্দ্রা এবং ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি।

এছাড়া, অন্যান্য ঔষধের সঙ্গে এর পারস্পরিক ক্রিয়া হতে পারে। এমনকি, অতিরিক্ত মাত্রায় আইভারমেকটিন সেবন করলে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে, ঔষধটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, ঔষধটি কোন রোগের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে, এর উপকারিতা, ঝুঁকি এবং বিকল্প চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, আইভারমেকটিন একটি ঔষধ, এবং এর সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *