পোপের শেষকৃত্যে বিশ্বনেতাদের মুখোমুখি, কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে!

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিশ্বনেতাদের আগমন, কূটনৈতিক সম্পর্কের জটিলতা বাড়ছে।

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য যখন বিশ্ব নেতারা ইতালির রাজধানী রোমে সমবেত হচ্ছেন, তখন ভ্যাটিকানের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরণের কূটনৈতিক সমস্যা এড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শনিবার অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনার জন্ম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, ব্রাজিলের বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন। অনেকের মনে প্রশ্ন, তাঁদের মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন হবে? রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবশ্য এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না বলে জানিয়েছেন।

২০০৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়কার পরিস্থিতিও আলোচনার বিষয়। সেই সময়ে ইরাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশের নেতারা কাছাকাছি আসনে বসেছিলেন, যা অনেকের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। জর্জ বুশ এবং তাঁর মিত্র টনি ব্লেয়ার ইরানের নেতাদের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সঙ্গে প্রিন্স চার্লসের করমর্দন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

ভ্যাটিকান বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তাদের দূত, যাঁদের ‘নুনসিও’ বলা হয়, তাঁরা কূটনৈতিক ও ধর্মীয় উভয় দায়িত্ব পালন করেন। সাধারণত কূটনীতিকদের চেয়ে তাঁদের ওপর মানুষের আস্থা বেশি থাকে। কারণ, তাঁরা অনেক গোপনীয় তথ্য জানেন। বিভিন্ন সংকট সমাধানে প্রায়ই ভ্যাটিকান পর্দার অন্তরালে কাজ করে থাকে।

অতীতে, ইরানের হাতে আটক ১৫ জন ব্রিটিশ নাবিকের মুক্তির জন্য পোপ বেনেডিক্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকি, সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টায় এবং গাজা ও দক্ষিণ সুদানে শান্তির জন্য ভ্যাটিকান কাজ করেছে। কিউবার সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে আটক হওয়া কয়েকশ মানুষকে মুক্তি দেওয়ায়ও ভ্যাটিকান সাহায্য করেছে।

পোপ ফ্রান্সিস মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে আরব উপদ্বীপে প্রথম পোপ হিসেবে সফরকালে তিনি আল-আজহারের ইমামের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা স্বাক্ষর করেন। ক্যাথলিক চার্চের বিশাল বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে এবং বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী। এই চার্চের গভীর ও বিস্তৃত কূটনীতি প্রায়শই সবার দৃষ্টির বাইরে থাকে। পোপের এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সেই কূটনীতির এক অনন্য চিত্র দেখা যেতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *