বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে যাওয়া অঞ্চলে ফিরছে বন্যপ্রাণী, দেখা মিলল সিংহের!

ক্যালিফোর্নিয়ার জঙ্গলে দাবানলের চার মাস পর, প্রকৃতির প্রতিশোধ!

লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে অ্যাঞ্জেলেস ন্যাশনাল ফরেস্টের ইটন ফায়ারের আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অঞ্চলে ধীরে ধীরে ফিরছে বন্যপ্রাণ। স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য, যারা তাদের ঘর হারিয়েছেন, বন্যপ্রাণীদের এই প্রত্যাবর্তন যেন নতুন করে বাঁচার আশা জাগাচ্ছে।

গত মার্চ মাসে, স্বেচ্ছাসেবকদের একটি দল প্রথম একটি পার্বত্য সিংহ (mountain lion – এক প্রকার বন্য বিড়াল) দেখতে পায়। এর কয়েকদিন আগেও সেটিকে আবার দেখা গেছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির (University of California, Los Angeles – UCLA) একজন অধ্যাপক ক্রিস্টেন ওচোয়ার নেতৃত্বে একটি দল এই অঞ্চলের পরিবেশ পুনরুদ্ধারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি চান, যারা এই আগুনে অনেক কিছু হারিয়েছেন, তাদের কাছে প্রকৃতির এই ফিরে আসাটা যেন একটা আশার আলো হয়ে দেখা দেয়।

আগুনের পর এলাকাটি একেবারে পুড়ে গিয়েছিল। ওচোয়ার দল তাদের ক্যামেরাগুলোও হারিয়েছিল, যা আগুনের ছবি ধারণ করতে গিয়ে পুড়ে যায়। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই তারা নতুন ক্যামেরা স্থাপন করে এলাকার পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নথিভুক্ত করতে শুরু করেন। ওচোয়া জানান, “আগুনের পরে যখন এখানে এসেছিলাম, তখন পাখির ডাক শুনে মন ভরে গিয়েছিল।

এই অঞ্চলের গাছপালা এবং বন্যজীবন নিয়ে গবেষণা করছেন ওচোয়া। তিনি iNaturalist নামক একটি প্ল্যাটফর্মে তাঁর পর্যবেক্ষণগুলো আপলোড করেন, যেখানে সারা বিশ্বের প্রকৃতিপ্রেমী এবং বিজ্ঞানীরা জীববৈচিত্র্যের তথ্য নথিভুক্ত করেন।

ইটন ফায়ারের ভয়াবহতা সত্ত্বেও, কিছু গাছপালা এখনও টিকে আছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এখানকার সান গ্যাব্রিয়েল ওক গাছগুলো (San Gabriel oak trees – এক ধরনের ওক গাছ) তাদের শক্তিশালী শিকড়ের কারণে আগুনে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে এবং তাদের গোড়ার চারপাশে নতুন করে সবুজ পাতা গজিয়েছে। এছাড়া, হলুদ মাস্টার্ড ফুলের মতো কিছু আগাছা দ্রুত বাড়ছে, যা স্থানীয় কিছু উদ্ভিদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য, ওচোয়ার দল ইউসিএলএ-র বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছে। তারা বাদুড় এবং পাখির ওপর আগুনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। সম্প্রতি, তাঁরা একটি নতুন ক্যামেরা স্থাপন করেছেন এবং সেখানে তারা বন্য বিড়ালের পায়ের ছাপ ও হরিণের তাজা পায়ের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছেন।

আকাশে দুটি লাল-লেজযুক্ত ঈগল (red-tailed hawks – এক প্রকার ঈগল) উড়ছিল, যা বসন্তের আগমনী বার্তা জানাচ্ছিল। এই অঞ্চলের পরিবেশ ধীরে ধীরে আগের রূপে ফিরছে, যা সত্যিই অত্যন্ত আনন্দের।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *