বিশ্বজুড়ে এখন ভ্রমণ মানে শুধু ঘুরে আসা নয়, বরং একটি দায়িত্বশীল অভিজ্ঞতা। পর্যটকদের মধ্যে ইদানীংকালে নৈতিক এবং টেকসই পর্যটনের চাহিদা বাড়ছে, যেখানে ভ্রমণের মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
এই ধরনের ভ্রমণের কয়েকটি অসাধারণ উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হলো, যা একইসঙ্গে আনন্দ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার সুযোগ তৈরি করে।
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানাতে, এলমিনার ‘গ্লোবাল মামাস’-এর উদ্যোগে তৈরি হওয়া একটি বাটিক কর্মশালায় যোগ দিতে পারেন। এখানে স্থানীয় মহিলারা ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে হস্তনির্মিত পণ্য তৈরি করেন, যা তাদের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দেয়।
আপনিও এই কর্মশালায় অংশ নিয়ে বাটিক তৈরির কৌশল শিখতে পারেন, যা একই সাথে একটি সৃজনশীল অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান।
ইতালির সিসিলিতে মাফিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা একটি ব্যতিক্রমী ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। ‘আড্ডিওপিজো’ নামক একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে, আপনি পালার্মোর অ্যান্টি-মাফিয়া ওয়াকিং ট্যুরে অংশ নিতে পারেন।
এই ট্যুর আপনাকে দেখাবে কীভাবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মাফিয়ার চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এখানে আপনি ‘ওয়াল অফ লিগালিটি’-র মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করতে পারবেন এবং মাফিয়া-বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
যদি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান, তাহলে ইকুয়েডরের সান্টা লুসিয়া ক্লাউড ফরেস্ট রিজার্ভে যেতে পারেন। স্থানীয় কমিউনিটি দ্বারা পরিচালিত এই ইকো-প্রকল্পে, আপনি ঘন জঙ্গলে হেঁটে যাওয়া, ঝর্ণার নিচে সাঁতার কাটা এবং স্থানীয় গবেষকদের সাথে বিরল প্রজাতির প্রাণী অনুসন্ধানে অংশ নিতে পারেন।
এটি একটি সত্যিকারের টেকসই পর্যটন, যা স্থানীয় পরিবারের জন্য আয়ের সুযোগ তৈরি করে এবং একই সাথে পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করে।
ফ্রান্সের বোর্দোতে, আপনি জৈব পদ্ধতিতে ওয়াইন তৈরির অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। শ্যাতো ডি লা ডফিন-এর মতো স্থানে, আপনি কিভাবে পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে ওয়াইন তৈরি করা হয়, সে সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এছাড়াও, ‘ক্যাভস দে রাউজান’ এ আপনি একটি জীববৈচিত্র্য ট্রেইলের মাধ্যমে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে পারেন এবং ওয়াইনারিগুলোতে ই-বাইক ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন।
স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ শহরে, ‘মার্কেট ট্যুরস’-এর ‘আওয়ার স্টোরিজ, ইয়োর সিটি’ নামক একটি কমিউনিটি উদ্যোগে অংশ নেওয়া যেতে পারে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত স্থানীয় বাসিন্দারা ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ পান।
এটি পর্যটকদের অনুদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে গর্ব ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে, স্থানীয় পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ রয়েছে। এখানকার ‘কমিউনিটি বেসড ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন’-এর মাধ্যমে আপনি কিজিল-ওই-এর মতো গ্রামে স্থানীয়দের বাড়িতে থাকতে পারেন।
এখানে আপনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও আতিথেয়তার স্বাদ নিতে পারবেন, যেমন কির্গিজ খাবার ‘চক চক’-এর মজাদার স্বাদ উপভোগ করা যেতে পারে।
আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি টাইরনে, আপনি একটি কমিউনিটি-মালিকানাধীন রিসোর্ট ‘আন ক্রেগান’-এ থাকতে পারেন। এখানে স্থানীয় মানুষের দ্বারা পরিচালিত কুটিরগুলিতে থাকার সুযোগ রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি একটি আরামদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
এই ধরনের নৈতিক ভ্রমণগুলি শুধু একটি সুন্দর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নয়, বরং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক।
আপনার পরবর্তী ভ্রমণে, এই ধরনের সুযোগগুলো বিবেচনা করে দেখুন।
তথ্য সূত্র: The Guardian