পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে চমক! খরচ কমছে?

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য : আগের পোপদের থেকে কম খরচে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ যখন পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে শোকাহত, তখন রোমান ক্যাথলিক চার্চ তাঁকে সমাধিস্থ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম হবে, তবে খরচ সম্ভবত আগের পোপদের তুলনায় অনেক কম হবে।

পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ বুধবার সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় রাখা হয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।

জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারাও তাঁর শেষকৃত্যে অংশ নিতে ভ্যাটিকানে যাবেন।

শনिवार সকালে এই শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আগের পোপদের থেকে ভিন্ন, পোপ ফ্রান্সিস একটি সাধারণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি সমাধিস্থ করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু নিয়ম পরিবর্তন করেছেন।

এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে একজন পোপকে একটিমাত্র কাঠের কফিনে সমাধিস্থ করা যাবে, যার ভিতরে জিঙ্ক-এর আস্তরণ থাকবে।

এই নিয়ম পরিবর্তনের ফলে প্রয়োজনে ভ্যাটিকানের বাইরেও তাঁকে সমাধিস্থ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস এর আগে এমনটাই চেয়েছিলেন।

তাঁর কফিনটি সেন্ট মেরি মেজর ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

এটি ভ্যাটিকান সিটির বাইরে অবস্থিত একটি চার্চ।

সেখানেই তাঁর সমাধিস্থ করার কথা।

১৬০০ সালের পর তিনিই প্রথম পোপ যিনি এখানে সমাধিস্থ হবেন, এবং গত ১০০ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি ভ্যাটিকানের বাইরে সমাধিস্থ হচ্ছেন।

২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ফ্রান্সিস সাধারণ জীবনযাপনের ওপর জোর দিয়েছিলেন।

তিনি বিলাসবহুল অ্যাপোস্টলিক প্যালেসের পরিবর্তে ভ্যাটিকান গেস্ট হাউসে থাকতে পছন্দ করতেন।

তিনি সাধারণত ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের স্থান, প্রাসাদ ইত্যাদির পরিবর্তে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেতে বেশি পছন্দ করতেন।

মাসিমো ফ্যাগিওলি

সোমবার প্রকাশিত তাঁর উইলে পোপ ফ্রান্সিস উল্লেখ করেছেন, তাঁর সমাধিস্থ করার খরচ একজন অজানা ব্যক্তি বহন করবেন, যা “পাপাল ব্যাসিলিকা অফ সান্টা মারিয়া ম্যাজোর”-এ পাঠানো হবে।

ফ্যাগিওলি আরও যোগ করেন, “এটি প্রতীকের বিষয়, কারণ ক্যাথলিক ধর্মে প্রতীক খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি তেমনই একটি ঘটনা।”

ভ্যাটিকানের আর্থিক সংকট :

ভ্যাটিকান এখনো পর্যন্ত পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের নির্দিষ্ট খরচ সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।

অতীতে পোপদের শেষকৃত্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে।

১৯৭৮ সালে দু’জন পোপের মৃত্যু এবং পরবর্তী কনক্লেভের (নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া) জন্য ভ্যাটিকানের প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল।

বর্তমান হিসেবে যা ১০১ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

২০০৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের শেষকৃত্যে এবং তাঁর উত্তরসূরি পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের নির্বাচনে ৯ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল, যা আজকের হিসেবে প্রায় ১৪.৭ মিলিয়ন ডলার।

যদিও চার্চ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।

এর মধ্যে রয়েছে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আয়, অনুদান, শেয়ার, বন্ড, রিয়েল এস্টেট এবং অন্যান্য বিনিয়োগ।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চার্চকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস প্রায়ই চার্চের আর্থিক বিষয় নিয়ে কার্ডিনালদের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছেন।

এমনকি তিনি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন আগেও এই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।

তিনি কিছু আর্থিক সংস্কারের সূচনা করেছিলেন, যার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বেতন কমানোর মতো পদক্ষেপও ছিল।

রয়টার্স সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা যায়, গত বছর চার্চের ৮৭ মিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘাটতি ছিল।

এমনকি ২০২২ সালের পর থেকে ভ্যাটিকান কোনো পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রকাশ করেনি।

ভ্যাটিকানের অর্থের প্রয়োজন, কারণ চার্চ এখন দরিদ্র দেশগুলোতে অনেক বেশি মানুষের সেবা করছে, যেখানে ধনী দেশগুলোতে ক্যাথলিকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

অধ্যাপক ফ্যাগিওলি

আর এখান থেকেই এই ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে।

ইতিমধ্যে, পবিত্র সপ্তাহের কারণে এরই মধ্যে রোম এবং বিশেষ করে ভ্যাটিকান সিটিতে প্রচুর ভিড় জমেছে।

পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর মরদেহ দর্শনের জন্য কত মানুষ সেখানে থাকবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

তবে ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, অতীতেও এমন ঘটনায় প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছে।

১৯৭৮ সালে ষষ্ঠ পলের মৃত্যুতে প্রায় এক লাখ মানুষ শোক প্রকাশ করতে জড়ো হয়েছিল।

২০০৫ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের শেষকৃত্যে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ রোমে এসেছিলেন।

অন্যদিকে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পোপ বেনেডিক্টের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

সাম্প্রতিক পোপদের শেষকৃত্যের জন্য চার্চ ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল, যা ভ্যাটিকানে আসতে না পারা মানুষদের জন্য সুযোগ তৈরি করেছিল।

বর্তমানে, হোটেলগুলো প্রায় বুক হয়ে গেছে।

ভ্যাটিকান সিটির কাছাকাছি অবস্থিত রেসিডেনজা পাওলো ষষ্ঠ মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বুক হয়ে গেছে।

এমনকি টমার্ক হোটেল ভ্যাটিকানো-ও আগামী সপ্তাহের জন্য তাদের সমস্ত ঘর বিক্রি করে দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *