পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বিশ্ব। তাঁর প্রয়াণের পর আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে যেন এক অন্যরকম আবেগ সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর প্রিয় ফুটবল ক্লাব, সান লরেন্সোর সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্কের কথা নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
ক্লাবটির সদস্য হিসেবে তাঁর কার্ডে খোদাই করা একটি নম্বর, যা ৮৮২৩৫, ঘিরে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে পোপ ফ্রান্সিসের এই নম্বরটি যেন এক গভীর অর্থ বহন করে।
কারণ, তিনি ৮৮ বছর বয়সে আর্জেন্টিনার সময় অনুযায়ী ভোর ২টা ৩৫ মিনিটে মারা যান। অনেকের মতে, এটি নিছক কাকতালীয় নয়, বরং নিয়তির ইঙ্গিত।
সান লরেন্সোর একজন ভক্ত, র মিরো রদ্রিগেজ বলেন, “এটা তো অবশ্যই নিয়তি।” তিনি জানান, পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি তাঁর দলের জার্সি পরেছিলেন।
পোপ ফ্রান্সিস খেলোয়াড় হিসেবেও ফুটবল ভালোবাসতেন। তিনি সান লরেন্সো ক্লাবের নিয়মিত সদস্য ছিলেন। খেলার প্রতি তাঁর এই ভালোবাসার কারণ ছিল, খেলাধুলা তরুণদের ভার্চুয়াল জগৎ থেকে দূরে রাখে এবং তাদের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করে।
তিনি বিশ্বাস করতেন, খেলাধুলা মানুষকে সমাজের সঙ্গে আরও বেশি করে যুক্ত করে।
পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওমার আব্বুদ জানান, পোপ সবসময় হাসিখুশি থাকতেন এবং মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে ভালোবাসতেন। তাঁর রসবোধ ছিল অসাধারণ।
আব্বুদ আরও বলেন, পোপের সঙ্গে তাঁর অনেক বিষয়ে আলোচনা হতো, বিশেষ করে সাহিত্য এবং ধর্মগ্রন্থ নিয়ে। তাঁদের মধ্যে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের একটি ইনস্টিটিউটও ছিল, যেখানে তাঁরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করতেন।
আর্জেন্টিনার মানুষ এখনও পোপ ফ্রান্সিসকে নিয়ে আবেগপ্রবণ। তাঁর শৈশবের বাড়ি, যেখানে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন, সেখানে ফুল ও শোকবার্তা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।
এমনকি যে গির্জায় তিনি যাজক হওয়ার ডাক শুনেছিলেন, সেখানেও তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। বুয়েনস আইরেসের মেট্রোপলিটন ক্যাথেড্রালের সিঁড়ি মোমবাতির আলোয় ভরে উঠেছে।
পোপের সম্মানে আর্জেন্টিনায় সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সান লরেন্সো ক্লাব তাদের পরবর্তী ম্যাচে প্রয়াত পোপকে উৎসর্গ করে বিশেষ জার্সি পরবে।
এছাড়া, নতুন একটি স্টেডিয়ামের নাম ‘পাপা ফ্রান্সিসকো’ রাখারও প্রস্তাবনা রয়েছে, যদিও পোপ নিজে এই ধরনের আইডিয়া পছন্দ করতেন না।
ফুটবল-পাগল আর্জেন্টিনায়, বিশেষ করে বুয়েনস আইরেসে, পোপ ফ্রান্সিস সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর ক্লাব কার্ডের নম্বর, তাঁর মৃত্যু এবং ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসার এই যোগসূত্র যেন এক গভীর বার্তা দিয়ে যায় – তিনি তাঁর ‘দুই ভালোবাসার’ প্রতি সবসময় অনুগত ছিলেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন