বদলাচ্ছে দুনিয়া! এআই যুগে সবাই কি বস হতে চলেছেন?

ভবিষ্যতে, প্রযুক্তি আমাদের কর্মপরিবেশে এক বিশাল পরিবর্তন আনতে চলেছে, যেখানে মানুষেরা হবে ‘এজেন্ট বস’ (কর্মীর তত্ত্বাবধায়ক)। সম্প্রতি, প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট (Microsoft) এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে।

তাদের মতে, আগামী দিনগুলোতে প্রত্যেক কর্মীই কোনো না কোনোভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence বা AI)-এর কর্মকর্তাদের পরিচালনা করবেন।

মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে ‘ফ্রন্টিয়ার ফার্ম’ (অগ্রণী সংস্থা) -এর উদ্ভব হবে।

এই ধরনের সংস্থায়, মানুষেরা মূলত স্বয়ংক্রিয় এআই এজেন্টদের (AI Agents) কাজ বুঝিয়ে দেবেন। এইসব এজেন্টরা তাদের কাজগুলো সম্পন্ন করবে এবং মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের তত্ত্বাবধান করবে।

মাইক্রোসফটের একজন নির্বাহী, জারেড স্পাটারো (Jared Spataro), এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, “এজেন্টরা যখন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে, তখন আমরা ‘এজেন্ট বস’-এর উত্থান দেখব।

এই ব্যক্তিরা এজেন্ট তৈরি করবেন, তাদের কাজ বুঝিয়ে দেবেন এবং তাদের কর্মক্ষমতা বাড়াবেন, যাতে তারা এআই যুগে নিজেদের ক্যারিয়ারকে আরও উন্নত করতে পারে।

প্রত্যেক কর্মীকে, বোর্ডরুম থেকে শুরু করে একেবারে মাঠপর্যায়েও, একজন এআই-চালিত স্টার্টআপের সিইও-এর মতো ভাবতে হবে।”

এই পরিবর্তনের প্রথম ধাপে, প্রত্যেক কর্মীর একজন এআই সহকারী থাকবে।

এরপর, এআই এজেন্টরা ‘ডিজিটাল সহকর্মী’ হিসেবে দলে যোগ দেবে এবং নির্দিষ্ট কিছু কাজ করবে।

সবশেষে, মানুষেরা এই এজেন্টদের কাজ বুঝিয়ে দেবে এবং তারা তাদের কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষ তাদের কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।

মাইক্রোসফটের মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিটি সংস্থাই ফ্রন্টিয়ার ফার্মে পরিণত হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করবে।

এই সংস্থাগুলো বর্তমানে প্রচলিত সংস্থাগুলো থেকে ‘অনেকটা আলাদা’ হবে এবং ‘চাহিদা-মাফিক বুদ্ধিমত্তা’ (on-demand intelligence) -এর ওপর ভিত্তি করে গঠিত হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নলেজ ওয়ার্ক (জ্ঞানভিত্তিক কাজ) -এর ক্ষেত্রে এআই-এর প্রভাব একই রকম হবে, যেমনটা সফটওয়্যার তৈরির ক্ষেত্রে হয়েছে।

অর্থাৎ, কোডিংয়ের সহায়তা থেকে শুরু করে এজেন্টদের দ্বারা কাজ সম্পন্ন করার দিকে এর অগ্রগতি হবে।

উদাহরণস্বরূপ, সাপ্লাই চেইনের একজন কর্মীর কথা ধরুন।

এআই এজেন্টরা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লজিস্টিকস (logistics) ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারবে, যেখানে মানুষেরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও সিস্টেম পরিচালনা করবেন।

তবে, এআই-এর এই দ্রুত বিকাশের কারণে কর্মসংস্থানে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই প্রযুক্তির কারণে কিছু ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কমতে পারে।

যুক্তরাজ্যের সরকার-সমর্থিত ‘ইন্টারন্যাশনাল এআই সেফটি রিপোর্ট’ (International AI Safety report)-এ বলা হয়েছে, এআই এজেন্টরা যদি খুব বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে, তবে অনেক মানুষ তাদের বর্তমান কাজ হারাতে পারেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund বা IMF) -এর অনুমান অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোতে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) প্রায় ৬০ শতাংশ চাকরি এআই দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং এর মধ্যে ৫০ শতাংশ চাকরির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও, প্রযুক্তি নতুন চাকরির সুযোগও তৈরি করবে, তাই সব মিলিয়ে কর্মসংস্থান হ্রাসের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের কর্মপরিবেশেও পরিবর্তন আসবে।

এখানকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখন থেকে এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

এআই-এর ব্যবহার একদিকে যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, তেমনি কর্মীদের নতুন দক্ষতা অর্জনেও উৎসাহিত করবে।

তাই, বাংলাদেশের কর্মীদেরও এই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে হবে এবং নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *