ট্রাম্পের ক্রাইমিয়া প্রস্তাব: আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে চলমান যুদ্ধের মধ্যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি প্রস্তাব আন্তর্জাতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি suggestion দিয়েছেন যে ইউক্রেন যেন রাশিয়ার কাছে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়।
এই প্রস্তাবের ফলে আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্বব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপ, যা ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে, সেটি নিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। তিনি বরাবরই বলে এসেছেন, ক্রিমিয়া ইস্যুতে কোনো আপস নেই।
ইউক্রেনের সংবিধানের পরিপন্থী কোনো পদক্ষেপ তিনি নেবেন না।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পের মতে, ক্রিমিয়া “বহু বছর আগেই” হাতছাড়া হয়ে গেছে।
এই বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ক্রিমিয়া রাশিয়ার সঙ্গেই থাকবে। জেলেনস্কি এবং সবাই এটা বোঝে।”
এই বিতর্কের ফলে ক্রিমিয়া আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। আসুন, এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেওয়া যাক।
আইনগত দিক।
আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন যদি কোনোভাবে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। কারণ, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বিভিন্ন ঘোষণা ও চুক্তির বরখেলাপ হবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম। এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, যার বিনিময়ে ইউক্রেন তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করে।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ সের্গেই ভাসিলিয়েভ মনে করেন, “শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত কোনো ভূখণ্ডকে বৈধতা দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের মূল নীতির পরিপন্থী।”
যদি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের আগের প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হবে।
এর ফল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ নিলে অন্যান্য দেশগুলো সম্ভবত তাদের অনুসরণ করবে না। এমনকী যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোর মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে।
এর ফলে ইউক্রেনকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্রিমিয়ার গুরুত্ব।
ক্রিমিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের অংশ ছিল। ২০১৪ সালে রুশ দখলের আগে এখানে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের বাস ছিল।
পর্যটকদের কাছেও এটি একটি জনপ্রিয় স্থান ছিল, বিশেষ করে এর সমুদ্র সৈকত এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের প্রেক্ষাপট।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে সরকার পরিবর্তনের পর ক্রিমিয়া সংকট শুরু হয়। বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী “ছোট্ট সবুজ মানুষ” ছদ্মবেশে ক্রিমিয়ায় প্রবেশ করে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা সরকারি ভবন ও সামরিক ঘাঁটিগুলো দখল করে নেয়। এরপর একটি বিতর্কিত গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
ঐতিহাসিক পটভূমি।
ঐতিহাসিকভাবে ক্রিমিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সাল থেকে উপদ্বীপটি গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টাইন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল।
একসময় এটি মঙ্গোলদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। ১৭৮৩ সালে রাশিয়ানরা ক্রিমিয়া দখল করে এবং ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এটি তাদের অধীনে ছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি।
বর্তমানে, রাশিয়া ক্রিমিয়ায় একটি কঠোর ও দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন একটি নিয়মিত ঘটনা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ মিশনও এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেশ করেছে।
২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৬৪,০০০ মানুষ ক্রিমিয়া ছেড়ে ইউক্রেনের অন্যান্য অঞ্চলে পালিয়ে গেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ক্রিমিয়াকে “রুশীকরণ”-এর চেষ্টা চলছে।
বহু রুশ নাগরিককে এখানে বসবাসের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন