ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা আবার শুরু হতে যাচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে বেশ কঠিন হতে পারে। এই আলোচনার মূল বিষয় হলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরান যেন তাদের পরমাণু কর্মসূচিকে বেসামরিক কাজে সীমাবদ্ধ রাখে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম বাইরে থেকে আমদানি করে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার তাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা কোনো অবস্থাতেই এই বিষয়ে আপস করতে রাজি নয়।
২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে একটি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির শর্ত ছিল, ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করবে, যার বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা বোমা তৈরির কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।
সম্প্রতি, ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে চিঠি লিখে নতুন একটি পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি দুই মাসের মধ্যে নতুন চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য ইরানকে সময় বেঁধে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, ইরানের সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করতে যা আগের চুক্তির চেয়ে শক্তিশালী হবে। তবে, তারা ঠিক কী চাইছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সম্পূর্ণ অবসান চাইছে, নাকি বেসামরিক প্রয়োজনে সীমিত কর্মসূচি চালাতে দিতে রাজি আছে—সে বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা যদিও বলছেন, ইরানের পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয়তার বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কোনো প্রয়োজন নেই। তবে ইরান এখনো তাদের অবস্থানে অনড়। তারা বলছে, তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার রয়েছে এবং এই বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে, ইসরায়েল চাইছে ইরান যেন তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, যাতে তারা কোনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মনে করেন, ইরানের সঙ্গে কেবল সেই চুক্তিই গ্রহণযোগ্য, যেখানে দেশটির পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা হবে।
আলোচনা যত কঠিন হবে, ততই দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সংকট বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া, আলোচনার সময়সীমাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যদি ইরানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী বা অনির্দিষ্টকালের জন্য বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব আসে, তবে চুক্তি চূড়ান্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে, উভয় পক্ষকেই নমনীয় হতে হবে, যাতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো যায়। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: সিএনএন