যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত অর্থ পাচারকারী জেফরি এপস্টাইনের যৌন নির্যাতনের শিকার এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রু’র বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা ভার্জিনিয়া জিউফ্রে’র (৪১) আত্মহত্যায় মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতন ও পাচারের শিকার হওয়ায় তিনি হতাশায় ছিলেন।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি খামারে তিনি আত্মহত্যা করেন। শনিবার (স্থানীয় সময়) পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে ভার্জিনিয়া গতকাল রাতে তার খামারে আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিপীড়ন ও পাচারের শিকার হয়েছেন। অবশেষে, নির্যাতনের যন্ত্রণা এত বেশি ছিল যে ভার্জিনিয়ার পক্ষে তা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।”
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে ছিলেন জেফরি এপস্টাইনের অন্যতম প্রধান শিকার। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কিশোরী বয়স থেকে এপস্টাইন এবং তার সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল তাকে যৌন নির্যাতনের শিকার করেছেন।
পরিবার তাকে যৌন নির্যাতন ও পাচারের বিরুদ্ধে ‘সাহসী যোদ্ধা’ এবং অন্যান্য ভুক্তভোগীদের জন্য ‘আলোবর্তিকা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “জীবনে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি উজ্জ্বল ছিলেন। তাকে সবসময় মিস করা হবে।”
জিউফ্রের তিন সন্তান রয়েছে, যাদেরকে তিনি খুব ভালোবাসতেন।
বিচারক এবং আইনজীবীরা জানিয়েছেন, জিউফ্রে ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। যারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য তিনি ছিলেন এক অনুপ্রেরণা।
তার আইনজীবী সিগ্রিড ম্যাককলি বলেন, “তিনি আমার বন্ধু ছিলেন এবং অন্য ভুক্তভোগীদের জন্য ছিলেন এক অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন। তার সাহস আমাকে আরও কঠিন লড়াই করতে উৎসাহিত করেছে।”
২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি আদালতের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্জিনিয়া জিউফ্রে। ছবি: এপি
যুক্তরাষ্ট্রের কেবল নেটওয়ার্ক নিউজ নেশন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এপস্টাইনের শিকারদের একজন আইনজীবী জশ স্কিফার বলেন, “এপস্টাইনের মুখোশ উন্মোচনে জিউফ্রের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। তার সাহসিকতার কারণেই অনেকে সামনে আসতে উৎসাহিত হয়েছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “যৌন পাচার একটি গুরুতর সমস্যা, যা এখনও বিদ্যমান। এটি তার রূপ পরিবর্তন করে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।
জিউফ্রের ঘটনাটি ছিল এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।”
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জিউফ্রের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও জানিয়েছে, শুক্রবার রাতে পার্থের কাছে নিয়ারগ্যাবিতে একটি বাড়িতে ৪১ বছর বয়সী এক নারীর নিথর দেহ পাওয়া যায়।
জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে, তবে এটিকে সন্দেহজনক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
এই মাসের শুরুতে জিউফ্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, একটি স্কুল বাস তার গাড়িতে ধাক্কা মারার পর তার কয়েক দিন বাকি আছে।
পরে, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে গত ২৪শে মার্চ একটি বাসের সঙ্গে একটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছিল, তবে এতে কেউ আহত হয়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ১লা এপ্রিল জিউফ্রে পার্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন।
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস/পিএ
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জিউফ্রে ২০০০ সালে ফ্লোরিডার ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে কাজ করার সময় ব্রিটিশ সমাজকর্মী ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে পরিচিত হন।
ম্যাক্সওয়েল তাকে এপস্টাইনের জন্য ম্যাসাজ থেরাপিস্টের চাকরি দেন। অভিযোগ রয়েছে, সেই সময়ে জিউফ্রে-কে এপস্টাইনের বন্ধু ও ক্লায়েন্টদের কাছে ‘ফল প্লেটারের মতো’ পাঠানো হতো।
২০০৯ সালে এপস্টাইনের বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তার কাজগুলোর মধ্যে ছিল ‘এপস্টাইনের বয়স্ক পুরুষ সঙ্গীদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন’।
এই মামলাটি বিচারের আগেই জিউফ্রে এপস্টাইনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন।
২০২১ সালে জিউফ্রে নিউইয়র্কের একটি ফেডারেল আদালতে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়, তিনি ১৭ বছর বয়সে অ্যান্ড্রু’র দ্বারা তিনবার যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। অ্যান্ড্রু বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০২২ সালে অ্যান্ড্রু এবং জিউফ্রে একটি গোপন চুক্তিতে উপনীত হন। একই বছর যৌন পাচারের দায়ে ম্যাক্সওয়েলকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৯ সালের জুলাই মাসে যৌন পাচারের অভিযোগে এপস্টাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আত্মহত্যা করেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান