চমকে দেওয়া জয়! ‘টিনা’ কী জাদু দেখালো?

নিউজিল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে নির্মিত একটি সিনেমা, ‘টিনা’, বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ছবিতে একজন সঙ্গীত শিক্ষকের গল্প বলা হয়েছে, যিনি নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি কোরাস দল তৈরি করেন।

ছবিটি শুধু বিনোদনমূলক নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে যা দর্শকদের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করেছে।

ছবিটির মূল চরিত্র, মারেটা পার্সিভাল, একজন শিক্ষক যিনি তার মেয়ের মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। তিনি শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

স্কুলের কর্তৃপক্ষের কিছু বাধা সত্ত্বেও, তিনি একটি কোরাস দল গঠন করেন, যা শিক্ষার্থীদের জীবন বদলে দেয়। এই দলের সদস্যরা একটি বাস্তব হাই স্কুল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।

‘টিনা’ ছবিটি ইতোমধ্যে নিউজিল্যান্ডে ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়েছে। স্থানীয় সিনেমায় এটি সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং আয়ের দিক থেকেও এটি দেশটির ইতিহাসে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

অকল্যান্ডের একটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দর্শকদের দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো হয়, যা শেষ হওয়ার পরেও অব্যাহত ছিল।

ছবিটির পরিচালক, মিকি মাগাসিভা, জানান যে ছবিটির নির্মাণ সহজ ছিল না। তিনি স্থানীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা এতে রাজি ছিলেন না।

তাদের ধারণা ছিল, ছবিতে বাইরের কোনো বড় তারকা না থাকলে হয়তো ছবিটি দর্শকপ্রিয়তা পাবে না। তবে ‘টিনা’ প্রমাণ করেছে যে স্থানীয় প্রতিভারাও সফল হতে পারে।

ছবিটির গল্প তৈরি হয়েছে একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। পরিচালক, যিনি সামোয়ান বংশোদ্ভূত, একটি হাই স্কুলের কোরাস দলের পারফরম্যান্স দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

সেই দলের সদস্যরা একটি ঐতিহ্যবাহী সামোয়ান গান পরিবেশন করেছিল। এই গানটি শ্বেতাঙ্গ, এশীয় এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল দ্বারা পরিবেশিত হয়েছিল।

ছবিটি বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং শ্রেণির মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ককে তুলে ধরেছে। ছবিতে জাতিগত বৈষম্যের চিত্রও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা সমাজের একটি কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।

তবে, এই ছবিতে ক্ষমা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অভিনেত্রী আনাপেলা পোলাটাইভাও, যিনি মারেটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তার মতে, ‘টিনা’র সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর সত্যতা। ছবিটিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের মানুষের সংস্কৃতি, তাদের হাসি-ঠাট্টা এবং জীবনযাত্রার নিজস্বতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

তিনি আরও জানান যে, এই ছবিতে তার অভিনয় দেখে অনেকে তাদের মা অথবা অন্য কোনো স্বজনের কথা মনে করেছেন।

‘টিনা’ ছবিটি ১ মে থেকে অস্ট্রেলীয় সিনেমা হলগুলোতে প্রদর্শিত হচ্ছে। এটি শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং মানবিক সম্পর্কের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *