স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া: সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি?

দাম্পত্য জীবনে কলহ: সম্পর্কের উন্নতিতে বিতর্কের কৌশল

ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার বন্ধনে আবদ্ধ হলেও, দাম্পত্য জীবনে মতের অমিল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মনোবিদরা বলছেন, এই মতবিরোধ বা কলহ-কে যদি সঠিক পথে পরিচালনা করা যায়, তবে তা সম্পর্কের জন্য উপকারী হতে পারে।

অনেক সময় আমরা মনে করি, ভালোবাসার সম্পর্কে কোনো ঝগড়া বা বিতর্ক নেই মানেই হয়তো সব ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবে, কোনো বিষয়ে আলোচনা না করে এড়িয়ে গেলে তা সম্পর্কের ভিতরের জটিলতা বাড়ায়, যা পরবর্তীতে গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অভিনেতা জর্জ ক্লুনি এবং তাঁর স্ত্রী আমাল ক্লুনির একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের প্রায় ১২ বছরের বিবাহিত জীবনে নাকি কোনো ঝগড়া হয়নি! তবে মনোবিদদের মতে, সবসময় ঝগড়া এড়িয়ে যাওয়াটা সম্পর্কের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।

সম্পর্কের মধ্যে মতানৈক্যগুলো প্রকাশ করা এবং সেগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে কলহ সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। যেমন—যদি ঝগড়াগুলি ভীতি তৈরি করে, আক্রমণাত্মক হয়, ঘন ঘন হতে থাকে, অথবা কোনো সমাধান না পাওয়া যায়, তবে তা স্বাস্থ্যকর নয়।

বিশেষ করে, শিশুদের সামনে এমনটা হওয়া উচিত নয়।

তবে, সম্পর্কের স্বাভাবিক কিছু বিষয় নিয়ে হওয়া তর্ক-বিতর্ক সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।

মনোবিজ্ঞানী জোয়ানা হ্যারিসন বলেন, “আসলে, তর্ক করা দম্পতিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। কারণ, এর মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা বাড়ে।”

তাহলে, কীভাবে এই বিতর্কের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা যায়?

প্রথমত, ঝগড়া বা বিতর্কের সময় জয়ী হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। মনোবিদ লিন্ডা ব্লেয়ারের মতে, “এখানে জেতা বা হারার কোনো বিষয় নেই। বরং, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা এবং ভালো করে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।”

কিছু কৌশল অবলম্বন করে বিতর্কের সময় নিজেদের শান্ত রাখা যেতে পারে।

  • আলোচনার উপযুক্ত সময় নির্বাচন করা জরুরি। হুট করে কোনো অভিযোগ না করে, আলোচনার জন্য একটি সময় ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে.
  • প্রশ্ন করার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত.
  • নিজের অনুভূতি এবং কথার জন্য দায়ী থাকুন। “তুমি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছো”—এই কথা বলার পরিবর্তে বলা যেতে পারে, “তোমার এই কাজটি আমাকে রাগিয়ে তোলে।”
  • আলোচনা বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়া যেতে পারে এবং পরে আবার আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।

আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়। এর ফলে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস বাড়ে।

হ্যারিসন মনে করেন, ঝগড়ার পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত, যাতে বোঝা যায়—আসলে কোন বিষয়টি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল।

সবশেষে, মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের উন্নতির জন্য বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এখানে মূল বিষয় হলো—আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানে একে অপরকে সহযোগিতা করা।

তথ্যসূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *