বাংলার গানের ভুবনে পরিবর্তনের ২৫ বছর: একুশ শতকে সঙ্গীতের চালচিত্র
গত দুই দশকে, সঙ্গীতের জগতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। একদিকে যেমন প্রযুক্তি আমাদের গান শোনার ধরন বদলে দিয়েছে, তেমনই গানের বিষয় এবং শিল্পীদের পরিচিতিতেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। জনপ্রিয় গানের তালিকা বিশ্লেষণ করে এই পরিবর্তনের ধারাটি বোঝা যেতে পারে।
২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া গানের তালিকা দেখলে একুশ শতকের সঙ্গীতের বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই তালিকাটি তৈরি করতে ইউকে-র চার্ট প্রস্তুতকারকদের প্রধানত গানের বিক্রি এবং ডিজিটাল স্ট্রিমিংয়ের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।
২০০০ সালের শুরুতে, “ক্যান উই ফিক্স ইট?” (Can We Fix It?) গানটি ছিল সবার মুখে মুখে। এরপর, শ্যাগি ও রিক্রকের “ইট ওয়াজন্ট মি” (It Wasn’t Me), ব্ল্যাক আইড পিসের “হোয়্যার ইজ দ্য লাভ?” (Where is the Love?) এর মতো গানগুলো জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল। এই সময়ে টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো’গুলোরও প্রভাব ছিল ব্যাপক। গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের গানগুলিও বেশ বিক্রি হত, যা সেই সময়ের সঙ্গীত বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল।
কিন্তু ২০১৪ সালে চার্ট তৈরির পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসে। গানের বিক্রি-র পাশাপাশি স্ট্রিমিংয়ের সংখ্যাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ফলে গানের জনপ্রিয়তার সংজ্ঞা যেন আরও বিস্তৃত হয়। এরপর থেকে, শ্রোতাদের গান শোনার ধরনেও আসে পরিবর্তন। গানের ধরন এবং শিল্পীর পরিচিতি—সবকিছুতেই লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালের জনপ্রিয় গান ছিল ড্রেক-এর “ওয়ান ডান্স” (One Dance), ২০১৭ সালে এড শিরানের “শেপ অফ ইউ” (Shape of You), এবং ২০১৮ সালে ক্যালভিন হ্যারিস ও ডুয়া লিপার “ওয়ান কিস” (One Kiss)। এই গানগুলো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও প্রচুর শোনা হয়েছে।
এই তালিকাটি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। প্রথমত, রক গানের প্রভাব কমেছে, যা সঙ্গীত জগতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। দ্বিতীয়ত, গানের ধারাগুলো ক্রমশ মিশে যাচ্ছে, যেখানে শিল্পীরা বিভিন্ন ধরনের উপাদান যুক্ত করছেন। এড শিরানের গানগুলো এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
এছাড়াও, গানের জগতে বিশ্বায়নের প্রভাব বেড়েছে। ইংরেজি ভাষার বাইরের শিল্পীরাও এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। কোরিয়ান পপ (K-pop) বা ল্যাটিন সঙ্গীতের মতো ধারাগুলোও পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করছে।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্পটিফাই (Spotify)-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো গানের শ্রোতাদের কাছে পছন্দের গান আরও সহজে পৌঁছে দিচ্ছে। তবে, এর ফলে গানের প্রতি শ্রোতাদের মনোযোগ কমে যাচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে। কারণ, এখনকার দিনে গানের শিল্পীদের চেয়ে গানগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তালিকার দিকে তাকালে আরও একটি বিষয় নজরে আসে—এখানে একক শিল্পী বা বিভিন্ন শিল্পীর মধ্যে সহযোগিতা বেশি দেখা যায়। টেলিভিশন রিয়্যালিটি শো’গুলোর কারণেও এমনটা হয়েছে।
এই সময়ের জনপ্রিয় গানের একটি বৈশিষ্ট্য হল, “নতুন একঘেয়েমি”। অ্যাডেল, লুইস ক্যাপাল্ডি, এড শিরানের মতো শিল্পীদের গানগুলো বেশ জনপ্রিয়, তবে সমালোচকদের মতে, এই গানগুলো হয়তো খুব বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করে না।
যদি একুশ শতকের সঙ্গীতের সেরা উদাহরণ জানতে চাওয়া হয়, তবে সম্ভবত এড শিরানকেই এক্ষেত্রে এগিয়ে রাখা যায়। তার গানের জনপ্রিয়তাকে স্ট্রিমিং-এর উত্থানের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
তবে, এই পরিবর্তনের মাঝেও কিছু শিল্পী, যেমন—টেলর সুইফট বা ওয়ান ডিরেকশন-এর মতো ব্যান্ড, যাদের জনপ্রিয়তা অন্যভাবে পরিমাপ করা হয়।
সংগীতের এই বিবর্তন এখনো চলমান। তাই, ভবিষ্যতে সঙ্গীতের চালচিত্র কেমন হবে, তা বলা কঠিন।
তথ্য সূত্র: The Guardian