প্রিন্স অ্যান্ড্রু ও এপস্টাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ভার্জিনিয়ার আত্মহত্যা, শোকের ছায়া

ভার্জিনিয়া গিউফ্রে, যিনি কুখ্যাত যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টাইন এবং প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন, আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার, এপ্রিল মাসের ২৪ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ারগ্যাবিতে তিনি মারা যান।

পরিবার সূত্রে এই খবর জানানো হয়েছে। গিউফ্রের বয়স হয়েছিল ৪১ বছর।

গিউফ্রের পরিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “যৌন নির্যাতন ও পাচারের শিকার হওয়া গিউফ্রে দীর্ঘদিন ধরে এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি ছিলেন অনেক নির্যাতিতের অনুপ্রেরণা।

জীবনের নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। তার মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি। তার সন্তান ক্রিশ্চিয়ান, নোয়া ও এমিলি তাদের মাকে খুব ভালোবাসতেন।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “নিজের নবজাতক কন্যাকে কোলে নেওয়ার পরেই গিউফ্রে উপলব্ধি করেন যে, যারা তাকে এবং আরও অনেককে নির্যাতন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তাকে রুখে দাঁড়াতে হবে।

আমাদের প্রিয় ভার্জিনিয়ার চলে যাওয়া গভীর শোকের। তিনি ছিলেন বীর এবং সবসময় তার সাহস ও ভালোবাসার জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। নির্যাতনের ভার একসময় এত বেশি হয়ে যায় যে, তা সহ্য করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল। আমরা জানি, তিনি এখন ফেরেশতাদের সঙ্গে আছেন।”

গিউফ্রের আইনজীবী সিগরিড ম্যাককওলি বলেন, “গিউফ্রে আমার কাছে শুধু একজন মক্কেল ছিলেন না, ছিলেন একজন প্রিয় বন্ধু এবং অন্য ভুক্তভোগীদের জন্য এক অসাধারণ যোদ্ধা।

তার সাহস আমাকে আরও কঠোরভাবে লড়াই করতে উৎসাহিত করেছে এবং তার শক্তি ছিল দৃষ্টান্তস্বরূপ। আজ বিশ্ব একজন অসাধারণ মানুষকে হারালো। শান্তিতে থাকুন, আমার মিষ্টি দেবদূত।”

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া পুলিশ মিডিয়া লিয়াজোঁ অফিসার শেলবি ব্র্যাডি এক বিবৃতিতে জানান, জরুরি পরিষেবা কর্মীরা শুক্রবার রাতে নিয়ারগ্যাবির একটি বাড়িতে যান এবং ৪১ বছর বয়সী এক নারীকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পান।

প্রাথমিক তদন্তে মৃত্যুর কারণ সন্দেহজনক নয় বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং মেজর ক্রাইম ডিটেকটিভরা বিষয়টি তদন্ত করছেন।

গিউফ্রে অতীতে তার ওপর হওয়া নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন। ২০০০ সালে, যখন তার বয়স ১৬ বছর, তখন ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল তাকে এপস্টাইনের হয়ে কাজ করতে বলেন।

গিউফ্রের অভিযোগ ছিল, ম্যাক্সওয়েল ও এপস্টাইন তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছেন এবং যৌনবৃত্তিতে নামাতে বাধ্য করেছেন। ২০০২ সালে তিনি এই চক্র থেকে পালিয়ে আসেন।

২০১৯ সালের আগস্টে শিশু পাচারের অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় নিউইয়র্কের একটি কারাগারে এপস্টাইন আত্মহত্যা করেন।

গিউফ্রে আরও জানান, এপস্টাইন ও ম্যাক্সওয়েল তাকে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পাচার করতেন। এদের মধ্যে ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু।

যদিও প্রিন্স অ্যান্ড্রু বারবার তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। (ম্যাক্সওয়েল বর্তমানে শিশু পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন, তবে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।)

ম্যাক্সওয়েলের রায়ের পর গিউফ্রে এক টুইটে লিখেছিলেন, “আমার আত্মা বহু বছর ধরে ন্যায়বিচারের জন্য আকুল ছিল এবং আজ বিচারকরা আমাকে সেই ফল দিয়েছেন। আমি এই দিনটি সবসময় মনে রাখব।”

২০২১ সালে, গিউফ্রে নিউইয়র্কে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাকে তিনবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের মধ্যে আদালতের বাইরে একটি সমঝোতা হয়, তবে এর পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি।

গিউফ্রে একটি অলাভজনক সংস্থা “স্পিক আউট, অ্যাক্ট, রিক্লেইম” (SOAR) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়াদের সহায়তা করে।

তথ্যসূত্র: পিপলস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *