কুকুরেরা কি সত্যিই মানুষের মতো চিন্তা করে? চাঞ্চল্যকর গবেষণা!

কুকুর: মানুষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু, নাকি মনের গভীরে লুকানো অন্য কিছু? বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কাছাকাছি থাকতে থাকতে তাদেরও কিছু বিশেষ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, যা হয়তো আমরা এখনো পুরপুরি বুঝি না।

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, একটি কুকুরের মানসিক বয়স প্রায় দুই বছর বয়সী একটি শিশুর সমান।

কুকুর কীভাবে এত সহজে মানুষের ভাষা বুঝতে পারে? তারা কি আমাদের আবেগ বুঝতে পারে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির ‘পাপি কিন্ডারগার্টেন’ প্রকল্পের পরিচালক ভ্যানেসা উডস-এর মতে, একটি কুকুর হাজারেরও বেশি শব্দের অর্থ জানে।

তারা শিশুদের মতোই শব্দ শেখে, বারংবার শুনে নয়, বরং অন্য শব্দগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। যেমন, ‘বানর’ শব্দটি শুনলেই একটি কুকুর তার খেলনাটি খুঁজে বের করতে পারে, কারণ সে জানে অন্যান্য জিনিসের থেকে ‘বানর’ আলাদা।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যানাইন সায়েন্স ল্যাবরেটরির পরিচালক অধ্যাপক ক্লাইভ উইন বলেছেন, “কুকুরেরা মানুষের সঙ্গে থাকতে থাকতে তাদের বিশেষ কিছু মানসিক ক্ষমতা তৈরি করেছে, যা তাদের মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে সাহায্য করে।

তিনি মনে করেন, কুকুরদের এই বিশেষ ক্ষমতাগুলো মূলত তাদের আবেগীয় জগতের সঙ্গে সম্পর্কিত।

কুকুরেরা যে মানুষের আবেগ বুঝতে পারে, সে বিষয়ে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ছোট বাচ্চা যেমন খুব দ্রুত তার আশেপাশের মানুষের আবেগ বুঝতে পারে, তেমনভাবে কুকুরও মানুষের শরীরের ভাষা এবং ইঙ্গিতগুলো বুঝতে পারে।

কিন্তু মানুষের আবেগ বোঝার ক্ষেত্রে আমরা, অর্থাৎ মানুষেরা, কতটা দক্ষ? উইন এবং তার সহকর্মীদের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ প্রায়ই কুকুরের আচরণকে তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে, কুকুরটির আসল আবেগ বুঝতে পারে না।

যারা নিজেদের সুখী মনে করেন, তারা একটি কুকুরের আবেগকেও ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করার সম্ভাবনা বেশি।

কুকুরেরা কি সত্যিই আমাদের ভালোবাসে? নাকি তারা কেবল আমাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে চায়?

অধ্যাপক ড্যানিয়েল মিলস-এর মতে, কুকুরদের মধ্যে মানুষের প্রতি এক অসাধারণ আনুগত্য দেখা যায়।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, তারা ভালোবাসে। তবে মানুষের ভালোবাসার মতো, ঠিক সেই পর্যায়ে নয়। তাদের ভালোবাসা হয়তো আরও বিশুদ্ধ।”

কুকুর এবং তাদের মালিকদের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে জাপানের আজাবু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তাকেফুমি কিকুসুই-এর একটি গবেষণা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কুকুর এবং তাদের মালিক একে অপরের দিকে তাকায়, তখন তাদের শরীরে ‘অক্সিটোকিন’ নামক হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, যা ভালোবাসার অনুভূতি তৈরি করে।

তাহলে, একটি কুকুরের ভালো জীবন কেমন হওয়া উচিত? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর উত্তর সম্ভবত প্রতিটি কুকুরের জন্য ভিন্ন।

তবে সাধারণভাবে, তাদের ভালো জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন খাবার, জল, আশ্রয়, নিরাপত্তা এবং তাদের মালিকের সঙ্গে গভীর আবেগপূর্ণ সম্পর্ক।

কুকুরেরা যে মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে, তার কারণ সম্ভবত বিবর্তনের ধারায় তারা মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখেছে।

তাই, আপনার কুকুরটি যদি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন সে হয়তো আপনার মনোযোগ চাইছে, অথবা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *