মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চলমান বিরোধ বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগের জের ধরে ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত সুবিধাও বাতিল করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বাধীনতা রক্ষার দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে হামাস কর্তৃক ইসরায়েলে হামলার ঘটনার পর থেকেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ দেখা যায়। এরপর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ ওঠে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া সমালোচনার কারণ হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ধরনের বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়নি।
এই ঘটনার সূত্র ধরে, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ফেডারেল তহবিলের সম্ভাব্য বিলুপ্তি, যা প্রায় ৮.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রোগ্রাম বাতিল করারও হুমকি দেওয়া হয়। প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের নীতি পরিবর্তনে বাধ্য করতে চাইছে।
বিশেষ করে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বৈচিত্র্যের অভাব’ এবং ‘মার্কিন মূল্যবোধের প্রতি সম্মান’ প্রদর্শনের ওপর জোর দিচ্ছে।
অন্যদিকে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে তাদের সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, সরকার তাদের শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষক নিয়োগ এবং গবেষণা-সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যায় এবং তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইনি লড়াই শুরু করে।
এ ঘটনার সূত্র ধরে, মার্কিন বিচার বিভাগ একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে, যার মূল দায়িত্ব ছিল ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। এই টাস্কফোর্স হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এবং সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে।
এছাড়াও, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নীতি পরিবর্তনের জন্য চাপ দিতে থাকে।
ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডকে জানানো হয়, তাদের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের জন্য সরকারি অনুদান পেতে হলে কিছু শর্ত মানতে হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, ইহুদি শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা, ক্যাম্পাসগুলোতে ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং ‘বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ কর্মসূচিগুলো সীমিত করা।
তবে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই শর্তগুলো মানতে রাজি হয়নি। তারা জানায়, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের স্বায়ত্ত শাসনের পরিপন্থী এবং তারা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ছাড়তে নারাজ।
বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন এবং এই মামলার রায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ এবং উচ্চশিক্ষার স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হচ্ছে, যা বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।