ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওমানে তেহরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছে। শনিবার মাস্কাটে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উভয় পক্ষই তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে এই আলোচনাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আলোচনার মূল বিষয় ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া। ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে রাজি, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার তাদের থাকতেই হবে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে। উভয় পক্ষের মধ্যে এই বিষয়ে সমঝোতা হওয়া কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।
ওমানের রাজধানী মাস্কাটে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। ওমান উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে।
এর আগে, একাধিকবার মাস্কাটে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।
আলোচনা শুরুর আগে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাস্কাট আন্তর্জাতিক বইমেলা পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে, উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওমানে আসেন।
এই আলোচনাগুলো এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এর আগে ২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে একটি পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন।
এরপর থেকে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনা সফল না হলে ইরানের ওপর সামরিক হামলার সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
আলোচনা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি হোক। তিনি আরও বলেন, এই আলোচনার মাধ্যমে একটি ভালো ফল আসবে এবং উভয় দেশের জন্যই তা উপকারী হবে।
আলোচনায় দুই দেশের বিশেষজ্ঞরাও অংশ নিচ্ছেন। ইরানের বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত রাভাঞ্চি। তিনি ২০১৫ সালের পারমাণবিক আলোচনাতেও অংশ নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কো রুবিওর নীতি-পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক মাইকেল আন্তন।
আলোচনার ফলাফলের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। ইরানের অর্থনীতি এরই মধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশটির মুদ্রা, রিয়াল, ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। এই অবস্থায়, আলোচনা সফল হলে ইরানের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস