কাশ্মীর সীমান্তে যুদ্ধের আঁচ? ভারতীয় সেনাদের উপর পাকিস্তানি হামলা!

কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাড়ছে সংঘাত

জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, শনিবার রাতে পাকিস্তানি সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি)-র কাছে ভারতীয় সামরিক পোস্টগুলোতে গুলি চালিয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে, কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর এক প্রাণঘাতী হামলার জের ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীর সীমান্তে একাধিক জায়গায় ভারতীয় সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে। ভারতীয় সেনারাও এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, পাকিস্তান এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সীমান্তের পরিস্থিতি এখনো পর্যন্ত স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অতীতে প্রায়ই দুপক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে সীমান্তে সংঘর্ষের সূত্রপাতের অভিযোগ এনেছে।

গত সপ্তাহে কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন ভারতীয়। ভারত এই ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামলার দায় স্বীকার করে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘কাশ্মীর প্রতিরোধ’ নামে একটি দল।

এই ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে জল-বন্টন চুক্তি স্থগিত করেছে এবং একমাত্র কার্যকরী সীমান্ত ক্রসিংটি বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়াও, রবিবার থেকে কার্যকর হওয়া ভিসাও বাতিল করেছে তারা।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাকিস্তানও ভারতীয়দের ভিসা বাতিল করে, তাদের আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্য বন্ধ করে দেয় এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করে। উভয় দেশের নাগরিকরা শুক্রবার পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের কাছে ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ শনিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি পানির প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাহলে পাকিস্তান এর ‘পুরোপুরি শক্তি’ দিয়ে জবাব দেবে। তিনি আরও জানান, পর্যটকদের ওপর হামলার বিষয়ে ‘নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তে’ পাকিস্তান সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান জোরদার করেছে। মঙ্গলবার রাতের ওই হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনী অন্তত ১,৫০০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের পরিবারের বাড়িতে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে। এতে অনেক বাড়িঘরের জানালা ভেঙে গেছে এবং দেয়াল ফেটে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে, ইরানের পক্ষ থেকে দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সৈয়দ আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ‘ইসলামাবাদ ও নয়া দিল্লিতে পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরির জন্য তেহরান তার ভালো সম্পর্ক কাজে লাগাতে প্রস্তুত।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি আশা করেন দেশ দুটি তাদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *