পোপের শেষযাত্রা: শোকের ছায়া, জানুন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিস্তারিত!

পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন।

রোববার, ইস্টার সানডে’তে ৮৮ বছর বয়সে প্রয়াত হন পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর প্রয়াণে শোকের ঢেউ লাগে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে।

ভ্যাটিকানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষের সমাগম হয়। এই নিবন্ধে প্রয়াত পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং তাঁর জীবন ও কর্মের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো।

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে সেন্টা মারিয়া ম্যাজোর ব্যাসিলিকায়, যা তাঁর প্রিয় একটি স্থান ছিল।

এই ব্যাসিলিকাতেই রয়েছে ভার্জিন মেরির একটি বিশেষ মূর্তি, যাঁর প্রতি পোপের গভীর শ্রদ্ধা ছিল।

শেষকৃত্যের আগের রাতে কার্ডিনাল ক্যামেরলেঙ্গো অন্যান্য উচ্চপদস্থ কার্ডিনালদের উপস্থিতিতে কফিনটি বন্ধ করেন এবং সিল করেন। কফিনের উপরে একটি সাদা কাপড় রাখা হয় এবং প্রয়াত পোপের মুখটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

কফিনের ভেতরে তাঁর শাসনকালের মুদ্রা এবং একটি সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত রাখা হয়, যা ‘রোগিতো’ নামে পরিচিত। এই নথিপত্রটি পরে পাঠ করা হয় এবং একটি বিশেষ সিলিন্ডারে ভরে কফিনের ভেতরে রাখা হয়।

কফিনটি তৈরি করা হয়েছিল কাঠের এবং জিঙ্ক দিয়ে, যার উপরে পোপের প্রতীক খোদাই করা ছিল।

পোপ ফ্রান্সিস সাধারণত পোপদের সমাধিস্থল সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা অথবা এর আশেপাশে সমাহিত হতে চাননি।

তিনি সেন্টা মারিয়া ম্যাজোর ব্যাসিলিকায় সমাধিস্থ হওয়ার কারণ ছিল, সেখানকার ‘সালুস পপুলি রোমানি’ নামক ভার্জিন মেরির প্রতি তাঁর গভীর ভক্তি।

বিদেশ সফরের আগে ও পরে তিনি এই ব্যাসিলিকায় যেতেন এবং সেখানকার মূর্তির সামনে প্রার্থনা করতেন।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, যেমন – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও, প্রিন্স উইলিয়াম, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

পোপ ফ্রান্সিস প্রায় ১২ বছর ধরে পোপের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সময়ে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক এবং গরিব ও দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতিশীল।

তবে, তাঁর কিছু নীতি, যেমন – পুঁজিবাদ ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমালোচনা, রক্ষণশীলদের মধ্যে কিছুটা বিতর্কের জন্ম দেয়।

পোপের মৃত্যুর পর নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা ‘কনক্লেভ’ নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় কার্ডিনালরা গোপন বৈঠকে মিলিত হন এবং ভোটের মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচন করেন।

ভোটের পর ব্যালট পেপারগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়। যদি নতুন পোপ নির্বাচিত না হন, তাহলে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, আর নতুন পোপ নির্বাচিত হলে সাদা ধোঁয়া দেখা যায়।

এই কনক্লেভে সাধারণত ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা ভোট দেন।

পোপ ফ্রান্সিস তাঁর সময়ে অনেক সংস্কার এনেছিলেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন এবং দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তিনি ভ্যাটিকানের একটি সাধারণ হোটেলে থাকতেন এবং পোপের আনুষ্ঠানিক লাল জুতার পরিবর্তে তাঁর পুরনো জুতা পরতেন। তিনি উদ্বাস্তু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।

পোপের প্রয়াণের পর ক্যাথলিক চার্চে নয় দিনের শোক পালন করা হয়, যা ‘নোভেন্ডিয়ালস’ নামে পরিচিত। খুব শীঘ্রই নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কনক্লেভ অনুষ্ঠিত হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *