গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC) এবং রুয়ান্ডার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি চুক্তির খসড়া তৈরি করতে উভয় দেশই আগামী ২ মের মধ্যে রাজি হয়েছে। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো একে অপরের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানো এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে DRC-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসে কায়িকওয়াম্বা ওয়াগনার এবং রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভার এনদুহুঙ্গিরহে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। উল্লেখ্য, বৈঠকে দুই মন্ত্রী করমর্দন করেননি। মূলত, কাতার উভয় দেশের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি স্থাপনের দুই দিন পরেই এই চুক্তিটি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একত্রিত করে DRC-এর পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। DRC-এর পূর্বাঞ্চলে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা থাকলেও সেখানে প্রায়ই M23 বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। জানুয়ারী মাস থেকে এই অঞ্চলে সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, M23 বিদ্রোহীদের সমর্থন যোগাচ্ছে রুয়ান্ডা। যদিও রুয়ান্ডা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, DRC-তে সক্রিয় মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে তারা নিজেদের নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে ১৯৯৪ সালের গণহত্যায় জড়িত হুতু গোষ্ঠীর সদস্যরাও রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও-র উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত যৌথ ঘোষণায় উভয় পক্ষই রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট নয় এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। যদিও এতে সরাসরি M23-এর নাম উল্লেখ করা হয়নি। ওয়াগনার পরে জানান, এই চুক্তির মাধ্যমে রুয়ান্ডান বাহিনীকে সেনা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যেমনটা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওয়াগনার আরও বলেন, “সুখবর হলো শান্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে শান্তি অর্জন করতে হলে সিরিয়াস, স্বচ্ছ ও আন্তরিক হতে হবে।” অন্যদিকে, এনদুহুঙ্গিরহে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প DRC-এর বিষয়ে আলোচনার মোড় ঘুরিয়েছেন, যার মধ্যে মার্কিন বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার নতুন দূত মাসাদ বাউলাস সম্প্রতি উভয় দেশ সফর করেছেন এবং কিগালিকে M23-কে সমর্থন বন্ধ করতে এবং সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ উভয় দেশকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করেছে।
২০২১ সাল থেকে উভয় পক্ষ অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো ভেঙে যায়। জানুয়ারী মাস থেকে চলমান সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং এর ফলে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা