**ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি: বিশ্ব অর্থনীতিতে অশনি সংকেত?**
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি আবারও বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকে সরাসরি আক্রমণ এবং আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপের হুমকির কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক বাজার।
অর্থনীতিবিদ ও বাণিজ্য বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের এই নীতি বিশ্ব অর্থনীতির অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলের প্রতি ট্রাম্পের আক্রমণ ছিল বেশ তীব্র। তিনি পাওয়েলকে ‘বড় পরাজিত’ হিসেবে অভিহিত করেন।
যদিও পরে তিনি জানান, পাওয়েলকে বরখাস্ত করার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। তবে, সুদহার কমানোর বিষয়ে পাওয়েলের নীতির সমালোচনা করেন ট্রাম্প। বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প সম্প্রতি কিছু দেশের ওপর ‘পাল্টা’ শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানান, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের এই নীতির কারণে মার্কিন ডলারের দাম গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। শেয়ার বাজারেও দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, বিশ্ব অর্থনীতি নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে।
এমনকি, যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শুল্ক বিভাগ জানিয়েছে, এপ্রিলে তাদের রপ্তানি কমেছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করছেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কেন গ্রিফিন বলেন, শুল্কের কারণে বিশ্বে আমেরিকার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী রে ডালিও মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি আমেরিকার অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, রেমিট্যান্সের উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এখন থেকেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন