মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে বিতর্ক: ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের সিইওকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তকে কেন সমর্থন?
নিউ ইয়র্কের রাজপথে ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্রায়ান থম্পসনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত লুইগি ম্যাংজিওনের সমর্থনে মুখর হয়েছেন অনেকে। ঘটনাটি একদিকে যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তেমনই স্বাস্থ্যখাত নিয়ে চলা বিতর্ককে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে।
অভিযুক্ত ম্যাংজিওনের প্রতি সমর্থন জানানোয় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। এই সমর্থনকারীদের মূল অভিযোগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়বহুল, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ম্যানহাটনের রাস্তায় ব্রায়ান থম্পসন নিহত হন। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ম্যাংজিওনের বিরুদ্ধে খুন, হয়রানি এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
ম্যাংজিওন বর্তমানে ফেডারেল আদালতে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন, যেখানে তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এমন গুরুতর অভিযোগের পরেও, ম্যাংজিওনের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন অনেকে। তাদের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজের কিছু গভীর ক্ষত উন্মোচিত হয়েছে।
ম্যাংজিওনের সমর্থনে এগিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলোর উচ্চ মুনাফার প্রবণতা এবং সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করা হয়। তাদের মতে, এই ব্যবস্থার শিকার হওয়া মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবেই ম্যাংজিওনকে দেখা উচিত।
ম্যাংজিওনের সমর্থনে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ‘কেটি’ নামের একজন জানান, তিনি ম্যাংজিওনকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, তবে স্বাস্থ্যখাতের নীতির বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “আমি জানি না, আমি এমন কাউকে ভালবাসতে পারি কিনা, যার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। তবে স্বাস্থ্যখাতের বিরুদ্ধে যিনি প্রতিবাদ করেছেন, আমি তাকে সমর্থন করি।”
আরেকজন সমর্থক, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেছেন, “সরকার হাজার হাজার অসুস্থ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী এবং তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হওয়া কর্মকর্তাদের রক্ষার জন্য ততটা গুরুত্ব দেয় না, যতটা একজন অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দেয়।”
এই সমর্থনকারীদের অনেকে মনে করেন, ম্যাংজিওনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সরকারের বাড়াবাড়ির ফল। তাদের মতে, অভিযুক্তকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেউ কেউ একে ‘বিচার বিভাগের বাড়াবাড়ি’ হিসেবেও দেখছেন।
তাদের ধারণা, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বৃহৎ কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকার এমনটা করছে।
এই মামলার আইনি প্রক্রিয়া নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ম্যাংজিওনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা মনে করেন, সরকার একটি উদাহরণ তৈরি করতে চাইছে, যা সমাজের প্রভাবশালী অংশের স্বার্থ রক্ষা করবে।
অন্যদিকে, ইউনাইটেড হেলথকেয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, তাদের বীমা পলিসিগুলি সঠিক এবং তারা রোগীদের চিকিৎসা খরচ প্রদানে সহায়তা করে।
তবে, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু উইটি স্বাস্থ্যখাতের কিছু দুর্বলতা স্বীকার করেছেন।
ম্যাংজিওনের প্রতি সহানুভূতিশীলদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতের এই দুর্বলতাগুলো সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা উচ্চ স্বাস্থ্য বীমা খরচ এবং চিকিৎসা পাওয়ার জটিলতার কথা উল্লেখ করেন। তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে ম্যাংজিওনের প্রতি সহানুভূতি দেখানোটা স্বাভাবিক।
এই ঘটনার জেরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যখাত নিয়ে বিতর্ক নতুন করে শুরু হয়েছে। একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানিগুলোর সমালোচনা হচ্ছে, তেমনি বিচার বিভাগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এই পরিস্থিতিতে, ম্যাংজিওনের মামলার ভবিষ্যৎ এবং এর প্রভাব কী হবে, সেদিকে তাকিয়ে আছে সবাই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন