যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার গল্ফ ক্লাব ‘ট্রাম্প ন্যাশনাল ডোরল মিয়ামি’ তে আগামী সপ্তাহে একটি সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে। এই সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে থাকছেন আন্দ্রেয়াস কালকার (Andreas Kalcker) নামের একজন ব্যক্তি।
কালকার মূলত ক্লোরিন ডাই অক্সাইড (chlorine dioxide) নিয়ে কাজ করেন, যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত একটি ব্লিচিং এজেন্ট। তিনি এই রাসায়নিক উপাদানটিকে ক্যান্সার, কোভিড-১৯ এবং অটিজমের (autism) মতো রোগের চিকিৎসার জন্য ‘অলৌকিক’ প্রতিষেধক হিসেবে প্রচার করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লোরিন ডাই অক্সাইড সেবন স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এটি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া এবং কিডনির (kidney) মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এমনকি জীবনহানিরও আশঙ্কা থাকে।
সম্মেলনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রুথ সিকার্স কনফারেন্স’ (Truth Seekers Conference), যেখানে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক এবং ভ্যাকসিন বিরোধী ব্যক্তিরাও অংশ নেবেন। এই সম্মেলনের আয়োজক চার্লি ওয়ার্ড (Charlie Ward)।
জানা গেছে, ওয়ার্ডের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র এরিক ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (Food and Drug Administration – FDA) ক্লোরিন ডাই অক্সাইড সেবনকারীদের ব্যাপারে সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা এটিকে ‘বিপজ্জনক ব্লিচ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
এফডিএ-এর মতে, অনলাইনে বিক্রি হওয়া এই ধরনের পণ্য কেনা বা পান করা উচিত নয়। কারণ, এর গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
আন্দ্রেয়াস কালকার দীর্ঘদিন ধরে ক্লোরিন ডাই অক্সাইডকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তিনি তার পণ্যকে ‘CDS’ (ক্লোরিন ডাই অক্সাইড সলিউশন) নামে বাজারজাত করেন।
কালকার নিজেকে ‘ডাক্তার’ হিসেবে পরিচয় দেন এবং ‘ইলেক্ট্রোমলিকিউলার মেডিসিন’-এর বিশেষজ্ঞ বলেও দাবি করেন। তিনি আরও দাবি করেন, তার এই ‘চিকিৎসা’ পদ্ধতির মাধ্যমে অটিজম, পার্কিনসন রোগ (Parkinson’s disease) এবং ভ্যাকসিনের (vaccine) কারণে হওয়া ক্ষতি সারানো সম্ভব।
তবে, এসব দাবির স্বপক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
আগেও ট্রাম্পের সময়ে ক্লোরিন ডাই অক্সাইড ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। ২০২০ সালে, কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে, ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে এই রাসায়নিক উপাদানকে ‘জীবাণুনাশক’ হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন, যা বিজ্ঞানীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সম্মেলনে ক্লোরিন ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর উপাদানের প্রচার অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। মানুষকে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য পরামর্শ এবং চিকিৎসার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কোনো অপ্রমাণিত বা ক্ষতিকর চিকিৎসা পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান