ট্রাম্পের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ধ্বংসের পথে? গভীর উদ্বেগে পরিবেশবিদরা!

ট্রাম্পের নতুন একটি সিদ্ধান্তের ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিশাল এলাকা, যা পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে মাছ ধরার নিয়ম শিথিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে ওই অঞ্চলের সমুদ্রজীবনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার পরিবেশের উপর কেমন প্রভাব পড়বে, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।

প্রশান্ত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘প্যাসিফিক আইল্যান্ডস হেরিটেজ মেরিন ন্যাশনাল মনুমেন্ট’-এর প্রায় ৫ লক্ষ বর্গ মাইলের বেশি এলাকা জুড়ে মাছ ধরার নিয়ম শিথিল করার নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই এলাকাটি মূলত সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৯ সালে এবং বারাক ওবামা ২০১৪ সালে এই এলাকাটিকে সংরক্ষণের ঘোষণা করেন। এখানে রয়েছে বিভিন্ন দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীর সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপের ফলে টুনা মাছের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, তবে এর দীর্ঘমেয়াদী ফল হবে অত্যন্ত খারাপ।

এই অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, কচ্ছপ, বিশাল শামুক, ডলফিন ও তিমি সহ আরো অনেক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী বাস করে। এছাড়াও, এখানে বিশ্বের প্রাচীনতম প্রবাল প্রাচীরগুলির কিছু অংশ রয়েছে।

এখানকার কিংম্যান রিফ-এ এখনো পর্যন্ত ভালোভাবে সংরক্ষিত প্রবাল প্রাচীরগুলি বিদ্যমান। ইউনেস্কোর মতে, এই অঞ্চলে অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি শিকারী মাছ বাস করে।

এখানে গ্রে রিফ শার্ক, ওশেনিক হোয়াইট টিপ, হ্যামারহেড এবং সিল্কি শার্কের মতো বিভিন্ন হাঙ্গর প্রজাতি বাস করে, যা এখানকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে, আমেরিকান পতাকাবাহী জাহাজগুলি মনুমেন্টের সীমানার মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ধরার সুযোগ পাবে। এর ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কারণে অনেক সময় অন্য প্রজাতির প্রাণীও জালে আটকা পড়ে, যা ‘বাইক্যাচ’ নামে পরিচিত। গ্রিনপিস-এর মতে, এর ফলে অবৈধভাবে মাছ ধরার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ডগলাস ম্যাককোলি সতর্ক করে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত হাঙ্গর সংরক্ষণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, “আপনি হয়তো প্রচুর টুনা মাছ ধরতে পারবেন, কিন্তু এর সঙ্গে অনেক হাঙ্গরও মারা যাবে।” হাঙ্গর ৪৫০ মিলিয়ন বছর ধরে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত তাদের সংরক্ষণে বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে আমেরিকান মৎস্যজীবীদেরও ক্ষতি করবে, কারণ এতে মাছের উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে।

হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের একজন নেতা সলোমন কাহুওহালাহা বলেন, “এই পবিত্র স্থানকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া দূরদৃষ্টির অভাব এবং এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে না।”

বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, এই ধরনের সংরক্ষিত এলাকাগুলির পরিবেশগত এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে।

তারা মনে করেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো বেশি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *