আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতা, যা উদ্বেগে ফেলেছে বিশ্বের অর্থনীতিকে। এর প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের বাজারে, যা থেকে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরাও শিক্ষা নিতে পারেন।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির ক্রেতারা তাদের কেনাকাটা বাতিল করতে শুরু করেছেন, যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।
যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজার এখন বেশ অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির আবাসন বিষয়ক একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।
এর মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা, যা অনেক সম্ভাব্য ক্রেতাকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ থেকে বিরত রাখছে। এছাড়া, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দেওয়ায় বন্ধকী ঋণের (mortgage) সুদও বাড়ছে, যা বাড়ি কেনার খরচ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতিও বাজারের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী এবং যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে বাড়ি নির্মাণ এবং সংস্কারের খরচ বাড়ছে, ফলে অনেক ক্রেতা তাদের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিশেষ করে, যারা পুরনো বাড়ি কিনে সংস্কার করে বসবাস করতে চান, তারা এখন শুল্কের কারণে দ্বিধাগ্রস্ত।
শেয়ার বাজারের অস্থিরতাও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এপ্রিল মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে, ডাউ জোন্স ইনডেক্স (Dow Jones Index)-এর সূচক প্রায় ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল।
এমন পরিস্থিতিতে, অনেক বিনিয়োগকারী তাদের সঞ্চয় নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এবং শেয়ার বাজার থেকে দূরে থাকছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করার আগে সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে, যাদের স্বল্প মেয়াদে বাড়ি কেনার পরিকল্পনা আছে, তাদের শেয়ার বাজারের পরিবর্তে অন্যান্য কম ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করা উচিত।
তারা পরামর্শ দেন, জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ হাতে রাখা ভালো।
তাহলে, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা এই পরিস্থিতি থেকে কী শিখতে পারেন?
প্রথমত, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্ক বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হারের পরিবর্তনগুলো সরাসরি আমাদের দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে।
দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। শেয়ার বাজারের অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক মন্দার মতো পরিস্থিতিতে, দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থিতিশীল খাতে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
এছাড়াও, জরুরি অবস্থার জন্য কিছু নগদ অর্থ সবসময় হাতে রাখা প্রয়োজন।
বর্তমানে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব বাজারের প্রভাবে আমাদের দেশেও অনেক পণ্যের দাম বাড়ছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, সচেতনতা এবং সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
সার্বিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারের এই পরিস্থিতি বিশ্ব অর্থনীতির একটি প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনা থেকে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা শিক্ষা নিতে পারেন এবং তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে আরও সুসংহত করতে পারেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন