বার্লিনে নাৎসি বন্দীশিবির বার্গেন-বেলসেনের মুক্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বন্দীশিবিরে ভয়াবহ অত্যাচার নেমে এসেছিল, যেখানে সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী এবং ইহুদিদের বন্দী করে রাখা হয়েছিল।
সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন জীবিত স্বজন ও উত্তরসূরিরা।
জার্মানির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই ক্যাম্পে ব্রিটিশ সেনারা ১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে বন্দীদের মুক্ত করে।
এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন ব্রিটিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার এবং আরও অনেকে। জানা যায়, এই বন্দীশিবিরে প্রায় ২০ হাজার যুদ্ধবন্দী এবং কমপক্ষে ৫২ হাজার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দী নিহত হয়েছিলেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন তরুণী আনা ফ্রাঙ্ক ও তাঁর বোন মার্গো।
অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ৮৮ বছর বয়সী গ্রিক নারী লোলা হাসিড অ্যাঞ্জেল জানান, বার্গেন-বেলসেন ছিল এক বীভৎস স্থান, যা ইতিহাসের পাতায় এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, ১০০ বছর বয়সী আলব্রেখট ওয়েইনবার্গ, যিনি আউশভিৎজ থেকে বার্গেন-বেলসেনে এসেছিলেন, তাঁর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমি যখন ট্রেনে করে আসছিলাম, তখন অর্ধমৃত অবস্থায় ছিলাম। বার্গেন-বেলসেনে এসে দেখি, মৃতদেহের স্তূপের মধ্যে জীবিতদেরও রাখা হয়েছে।
এরপর ব্রিটিশ সেনারা আমাদের উদ্ধার করে। মুক্তির সময় আমার ওজন ছিল মাত্র ২৯ কেজি।”
১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ সেনারা যখন ক্যাম্পটিতে প্রবেশ করে, তখন সেখানকার ভয়াবহ দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল সবাই।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর এক শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসক সেই সময় জানিয়েছিলেন, এখানে টাইফাস, টাইফয়েড ও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হাজার হাজার রোগী ছিলেন। সেখানকার পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ।
ক্যাম্পের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে মুক্তির পরেও বহু বন্দী মারা যান।
জানা যায়, মুক্তির পর শুধু জুন মাস পর্যন্ত ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, কারণ তাঁদের শরীর নতুন খাবার হজম করতে পারছিল না।
বার্লিনের এই ঘটনা শুধু একটি বন্দীশিবিরের মুক্তি বা গণহত্যার হিসাব নয়, বরং এটি মানবতার চরম অবক্ষয়ের এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সেই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian