দাড়্ফুরের জামজাম ক্যাম্পে আরএসএফের ভয়াবহ আক্রমণ: শত শত মানুষের মৃত্যু, উদ্বাস্তু জীবন।
উত্তর দার্ফুরের জামজাম শরণার্থী শিবিরে, যা একসময় শান্তির আশ্রয়স্থল ছিল, সেখানে গত এপ্রিল মাসে আরএসএফ (Rapid Support Forces) –এর চালানো এক ভয়াবহ হামলায় কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জীবন বর্তমানে চরম সংকটে।
মানবিক বিপর্যয়ের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও বহু মানুষ। খবর অনুযায়ী, এই হামলায় সেখানকার বাসিন্দাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। ঘরবাড়িগুলো হয় ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
জামজাম ক্যাম্পটি এল-ফাশের শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। দারফুর সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষেরা এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। ২০০০ সাল থেকে এটি উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত ছিল।
শুরুতে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ এখানে এসে আশ্রয় নেয়। সুদানে আরএসএফ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তখন এই সংখ্যাটা বেড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরএসএফের সেনারা প্রথমে ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। জীবন বাঁচাতে মানুষজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। বহু পরিবার তাদের আশ্রয় হারিয়ে ফেলে।
অনেকের কোনো খোঁজ মেলেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আরএসএফ সদস্যরা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে। অনেক যুবককে হত্যা করা হয়েছে এবং নারী ও শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে। এমনকি ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বাস্তুচ্যুত হওয়া এক নারী আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে এসেছিলেন।
ডাঃ ইব্রাহিম আব্দুল্লাহ, যিনি উত্তর দারফুরের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক, আল জাজিরাকে টেলিফোনে জানান, মৃতের সংখ্যা সম্ভবত ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, “সুদানের ঐতিহ্য অনুযায়ী, মৃতদেহ দ্রুত দাফন করার কারণে হতাহতের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী, নাসর, যিনি একসময় জালিন্হির বাসিন্দা ছিলেন, জানান, আরএসএফ যোদ্ধারা শহরটি দখল করার পর তিনি তার পরিবার নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে জামজামে আসেন। সেখানে তারা একটি আশ্রয় তৈরি করেন এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন।
কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে আরএসএফ আবার আক্রমণ করে। নাসর বলেন, “এই পৃথিবীতে গাছেরও বুঝি আমাদের চেয়ে বেশি মূল্য।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যেন আমাদের মানবিক মূল্য হারিয়ে ফেলেছি।
জামজামের বাস্তুচ্যুতদের মুখপাত্র, মোহাম্মদ খামিস, বর্তমানে এল-ফাশেরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আরএসএফের হামলায় তিনি আহত হন। খামিস জানান, গত পাঁচ মাসে ক্যাম্পটিতে ২৮ বারের বেশি হামলা হয়েছে, তবে এবারের হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
আরএসএফ যদিও দাবি করেছে যে তারা জামজামে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, তবে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের এই দাবিকে সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, সেখানে কেবল সাধারণ মানুষজন জীবন ধারণের জন্য লড়াই করছিল।
এই পরিস্থিতিতে, সেখানকার মানুষের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে। উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা মানুষগুলো বর্তমানে খাদ্য, ঔষধ এবং মৌলিক সুরক্ষার অভাবে দিন কাটাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা