ফিলিপাইন এবং চীনের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের একটি বিতর্কিত রিফ (প্রবাল প্রাচীর) নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন দাবি করেছে যে তাদের কোস্টগার্ড ফিলিপাইনের কয়েকজন কর্মীকে একটি ছোট রিফে “হ্যান্ডেল” করেছে, তবে ফিলিপাইন সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
উভয় দেশই এই অঞ্চলের উপর নিজেদের অধিকার কায়েম করতে চাইছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীনের কোস্টগার্ডের মুখপাত্র লিউ দেজুন এক বিবৃতিতে জানান, রবিবার ফিলিপাইনের ছয়জন সদস্য বিতর্কিত টাইক্সিয়ান রিফে (যা স্যান্ডি কে নামেও পরিচিত) “অবৈধভাবে প্রবেশ” করেন। লিউ আরও জানান, চীনের কোস্টগার্ড সদস্যরা এরপর “রিফে প্রবেশ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়।”
তবে ওই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ বা ফিলিপাইনের ওই ছয়জনের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
অন্যদিকে, ফিলিপাইনের কর্মকর্তারা সোমবার চীনের ওই দাবিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, চীন স্যান্ডি কে দখল করেনি এবং রবিবার ফিলিপাইনের একটি মিশন সেখানে গিয়েছিল, যেখানে তাদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
ফিলিপাইনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা চীনের এই ধরনের খবরকে বেইজিংয়ের অপপ্রচার হিসেবে দেখছে।
জানা গেছে, বিতর্কিত এলাকাটিতে ফিলিপাইনের কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালিয়েছে এবং সেখানে ফিলিপাইনের পতাকা উত্তোলন করেছে।
ফিলিপাইনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, ওই মিশনের সময় চীনা জাহাজ সেখানে উপস্থিত ছিল, তবে চীনের দাবি অনুযায়ী তাদের কোনো “হ্যান্ডেলিং” করা হয়নি।
এদিকে, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির কোস্টগার্ড টাইক্সিয়ান রিফের উপর “সামুদ্রিক নিয়ন্ত্রণ” প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা সেখানে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযান চালায় এবং ফিলিপাইনের “অবৈধ কার্যকলাপ”-এর প্রমাণ হিসেবে ভিডিও সংগ্রহ করে।
প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, পাঁচজন চীনা কোস্টগার্ড সদস্য রিফে চীনের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি অবস্থিত স্যান্ডি কে, যেখানে ফিলিপাইনের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই ঘটনার কয়েক দিন পরেই ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বার্ষিক যৌথ সামরিক মহড়া “বালিকাটান” শুরু হয়েছে।
চীন এই মহড়াকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করে এবং ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে বহিরাগত শক্তির সঙ্গে জোট বাঁধার অভিযোগ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের কোস্টগার্ড কর্তৃক বিতর্কিত রিফে পতাকা স্থাপন করা, শুধুমাত্র ম্যানিলার প্রতি নয়, বরং ওয়াশিংটনের প্রতিও একটি বার্তা।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা