ইয়েমেনে বোমা: উদ্বাস্তু শিবিরে মার্কিন হামলা?

**ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় আফ্রিকান অভিবাসী বন্দীশালায় হতাহতের অভিযোগ**

ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীরা অভিযোগ করেছে যে, মার্কিন বিমান হামলায় একটি বন্দীশালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেখানে আফ্রিকান অভিবাসীদের আটকে রাখা হয়েছিল। তাদের দাবি, হামলায় প্রায় একশ’ বন্দীর মধ্যে অনেকে হতাহত হয়েছে।

যদিও মার্কিন সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী এলাকা সা’দা প্রদেশে এই হামলা চালানো হয়েছে, যা হাউছি বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে চলা ইয়েমেনের যুদ্ধ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।

জীবন বাজি রেখে তারা প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে আসে।

এই ঘটনার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন রাফ রাইডার’ নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই অভিযানের লক্ষ্য হাউছি বিদ্রোহীরা।

একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, যাদের সমর্থন হাউছিরা পেয়ে থাকে। ইরান দ্রুত পারমাণবিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে তাদের বিমান হামলার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করার নীতি রক্ষা করেছে। তারা জানিয়েছে, “অপারেশনাল নিরাপত্তা বজায় রাখতে আমরা আমাদের চলমান বা ভবিষ্যৎ অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে সীমিত রয়েছি।”

যদিও সা’দাতে হামলার বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

হাউছিদের আল-মাসিরাহ স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে মৃতদেহ এবং আহতদের আনা হয়েছে।

আল-মাসিরার একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ওই স্থানে প্রায় একশ’ অভিবাসীকে আটক রাখা হয়েছিল।

আহত ও নিহতদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে প্রকাশিত ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে।

বন্দীশালার দেয়ালগুলো ধ্বংসাবশেষের টুকরোয় ঝাঁঝরা হয়ে গেছে এবং আহতদের ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে।

ফুটেজে একটি নারীর কণ্ঠ শোনা যায়, যিনি “বিসমিল্লাহ” বলে আরবী ভাষায় প্রার্থনা শুরু করেন। আহতদের সাহায্য করার সময় মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা যায়।

দীর্ঘদিন ধরে ইথিওপিয়া এবং অন্যান্য আফ্রিকান দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা কাজের আশায় ইয়েমেনে পাড়ি জমায়। এরপর তারা সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করে।

অভিযোগ রয়েছে, হাউছি বিদ্রোহীরা সীমান্ত পার করার সময় অভিবাসীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে।

ইয়েমেনের এই যুদ্ধে অভিবাসীরা প্রায়ই আটক, নির্যাতিত ও নিহত হয়। জাতিসংঘের একটি চিঠিতে সৌদি আরবের প্রতি অভিযোগ করা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় ৪৩০ জন অভিবাসী নিহত এবং ৬৫০ জন আহত হয়েছেন।

যদিও সৌদি আরব বরাবরই অভিবাসী হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সোমবারের এই হামলার ঘটনাটি সম্ভবত ২০২২ সালের একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হামলায় কমপক্ষে ৮৭ জন নিহত এবং ২৬৬ জন আহত হয়েছিল।

এটি ছিল জোট ও হাউছি বিদ্রোহীদের মধ্যে হওয়া দীর্ঘ যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এদিকে, মার্কিন বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছে বলে হাউছিরা জানিয়েছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনী তাদের মাসব্যাপী অভিযানে ৮০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘অপারেশন রাফ রাইডার’-এর মাধ্যমে তারা হাউছি যোদ্ধাদের এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত অনেক নেতাকে হত্যা করেছে।

তবে নিহতদের কারও পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “ইরান নিঃসন্দেহে হাউছিদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ইরানের সহযোগিতা ছাড়া হাউছিরা আমাদের বাহিনীর ওপর হামলা চালাতে পারবে না। আমরা নৌ চলাচলের স্বাধীনতা এবং এই অঞ্চলে মার্কিন প্রতিরোধের উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চাপ অব্যাহত রাখব।”

যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা এবং ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের কারণে হাউছিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া, ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হাউছিরাই একমাত্র যারা নিয়মিতভাবে ইসরায়েলে হামলা চালাতে সক্ষম।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *