নারী রেসিং ড্রাইভার ক্যাথরিন লেগ-এর অনলাইন হেনস্থার শিকার, মুখ খুললেন নাসকার এই তারকা।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় মোটর রেসিং প্রতিযোগিতা নাসকারে (NASCAR) প্রবেশ করার পর থেকেই অনলাইনে ব্যাপক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার ক্যাথরিন লেগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, হত্যার হুমকি এবং আপত্তিকর বার্তা পাঠানো হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।
মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া এই হেনস্থার শিকার হয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন ৪৪ বছর বয়সী এই রেসিং তারকা। তিনি জানান, প্রতিদিন হাজারো বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা, এমনকি তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
অনেকে তাকে গাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য নানা রকম মন্তব্য করছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রথমে চুপ থাকতে চাইলেও, সম্প্রতি ট্র্যাকের খারাপ পারফর্মেন্সের পর তিনি মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন।
ক্যাথরিন জানান, অনলাইনে ভক্তদের সমর্থনকে তিনি স্বাগত জানান, তবে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তিনি মনে করেন, অনলাইনে বুলিংয়ের মাত্রা বাড়ছে এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া জরুরি।
“বর্তমানে অনলাইনে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করা যেন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে,” তিনি বলেন। “কিছু মানুষ এমন সব কথা লিখেন, যা তারা বাস্তবে বলার সাহস পান না।”
শুধু ক্যাথরিনই নন, খেলাধুলার জগতে অনেক নারী তারকাকেই এমন অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে। বাস্কেটবল খেলোয়াড় অ্যাঞ্জেল রীস, টেনিস তারকা ক্যারোলিন গার্সিয়া এবং বাস্কেটবল তারকা ব্রেনা স্টুয়ার্ট-এর মতো ক্রীড়াবিদদেরও অনলাইনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
ক্যাথরিন লেগ মনে করেন, পুরুষদের প্রাধান্যপূর্ণ খেলাধুলায় নারীদের টিকে থাকতে বেশি সংগ্রাম করতে হয় এবং এক্ষেত্রে অনলাইনে হেনস্তার শিকার হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
তিনি বলেন, “পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত খেলাধুলায় নারীদের একটু বেশি চোখে পড়ার কারণে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। অনেক সময় নারীদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়, কারণ অনেকে মনে করেন, তারা হয়তো কোটা কিংবা অন্য কোনো সুবিধার কারণে এসেছেন।”
নাসকারের পক্ষ থেকেও ক্যাথরিনের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। নাসকার কমিশনার স্টিভ ফেলপস এই ধরনের আচরণকে “অগ্রহণযোগ্য” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং ক্যাথরিনকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, “ক্যাথরিন একজন সফল রেসিং ড্রাইভার এবং আমরা তাকে নাসকারে দেখতে চাই। যারা তাকে ঘৃণা করে, তাদের নাসকারে কোনো জায়গা নেই।”
ক্যাথরিনের মতে, এই ধরনের অনলাইন হেনস্থা বন্ধ করতে হলে সমাজে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি চান, মানুষ যেন অনলাইনে অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় এবং বুলিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
লেগের মতে, যারা এসব হুমকি দেয়, তাদের প্রতি তার সহানুভূতি হয়। কারণ, তিনি কখনোই কারো সম্মানহানি করে নিজে উপরে উঠতে চাইবেন না। তিনি চান, তার এই সংগ্রামের কথা শুনে, যারা অনলাইনে বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন, তারা যেন সাহস পান এবং এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন।
বর্তমানে, ক্যাথরিন আরও ১১টি রেসে অংশ নিচ্ছেন এবং ভালো ফল করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জানান, “আমি ট্র্যাকগুলোতে দারুণ সময় কাটাচ্ছি এবং ভালো ফল করার চেষ্টা করছি। আমি আশা করি, বছরের শেষে কিছু ভালো ফল করতে পারব।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন