ঐতিহাসিক তাসখন্দের অজানা স্থাপত্য: সোভিয়েত যুগের বিস্ময়কর সৃষ্টি!

উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ, যা একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, সেখানে আধুনিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন আজও বিদ্যমান। বিশাল আকারের এই শহরটিতে সোভিয়েত আমলে নির্মিত কিছু স্থাপত্যকর্ম এখনো টিকে আছে, যা আন্তর্জাতিক আধুনিকতার সঙ্গে স্থানীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক চমৎকার মিশ্রণ।

এই স্থাপত্যগুলো কেবল নকশার দিক থেকেই আকর্ষণীয় নয়, বরং সোভিয়েত যুগের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বর্তমানে, এই ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনগুলোকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।

তাসখন্দের স্থাপত্যশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর ভিন্নতা। এখানে একদিকে যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া দেখা যায়, তেমনই অন্যদিকে তৈমুরীয় সাম্রাজ্যের স্থাপত্যের প্রভাবও সুস্পষ্ট। এই মিশ্রণটি শহরটিকে দিয়েছে এক বিশেষ পরিচিতি, যা এটিকে অন্যান্য শহর থেকে আলাদা করে তোলে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত চোরসু বাজার একটি অন্যতম উদাহরণ। এটি বিশাল আকারের একটি বাজার, যা ফল, মাংস এবং মাছের জন্য বিখ্যাত। এই বাজারের বিশাল গম্বুজগুলি সোভিয়েত আধুনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এছাড়া, শহরের স্টেট সার্কাসটিও দর্শকদের নজর কাড়ে, যার নকশা অনেকটা একটি ইউএফও-র মতো। এই ভবনগুলি যেন সোভিয়েত যুগের প্রকৌশল এবং শৈল্পিক চেতনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯৬৬ সালের ভূমিকম্পের পর তাসখন্দকে নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়। সেই সময়ে মস্কো থেকে আসা স্থপতিরা শহরের জন্য এমন সব নকশা তৈরি করেন, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতির উপাদান যুক্ত করা হয়। এই নকশাগুলোতে একদিকে যেমন আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল, তেমনি তৈমুরীয় স্থাপত্যের অলঙ্করণও দেখা যেত।

লেনিন মিউজিয়াম (বর্তমানে স্টেট হিস্টরি মিউজিয়াম) এই ধরনের স্থাপত্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। মার্বেল পাথরের তৈরি এই ভবনটিতে জ্যামিতিক নকশা এবং স্থানীয় কারুশিল্পের এক চমৎকার সমন্বয় দেখা যায়।

এছাড়া, প্যালেস অফ পিপলস ফ্রেন্ডশিপ, যা একসময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কেন্দ্র ছিল, সেটিও সোভিয়েত যুগের স্থাপত্যের এক অনন্য উদাহরণ।

আবাসিক এলাকার মধ্যেও আধুনিক স্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ, “জেমচুগ” আবাসন ব্লক-এর কথা বলা যায়। এই ১৬ তলা ভবনে ঐতিহ্যবাহী মহল্লা-র ধারণাকে আধুনিক উপায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বাসিন্দাদের জন্য সামাজিক স্থান এবং উঠোনের ব্যবস্থা ছিল।

শহরের বাইরে, পার্কেন্ট-এ অবস্থিত সান হেলিওকমপ্লেক্স এক অত্যাশ্চর্য দৃশ্য। এটি মূলত সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এই কমপ্লেক্সটি আধুনিক প্রকৌশল এবং শৈল্পিক চেতনার এক অনন্য উদাহরণ।

তাসখন্দের এই স্থাপত্যকর্মগুলো শুধু ভবন নয়, বরং একটি যুগের প্রতিচ্ছবি। এগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং স্থানীয় ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই স্থাপত্যগুলোকে টিকিয়ে রাখা এবং এর ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *