শিরোনাম: অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার: অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, গবেষণায় উদ্বেগ
সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণা জানাচ্ছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed food) গ্রহণের সঙ্গে অকাল মৃত্যুর (premature death) একটি সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণাটি খাদ্যভ্যাস ও স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে এই ধরনের খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষাপটে।
গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যের তালিকায় অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়লে, 75 বছরের কম বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু দেশে অকাল মৃত্যুর জন্য প্রতি সাতজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই ধরনের খাবার।
ব্রাজিলের ওসওয়াল্ডো ক্রুজ ফাউন্ডেশনের গবেষক এদুয়ার্দো আগস্টো ফার্নান্দেজ নিলসন এই গবেষণার প্রধান ছিলেন। তিনি বলেন, খাবারে স্বাদ ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা নানা রাসায়নিক উপাদান, যেমন—মিষ্টি ও ফ্লেভার, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শুধু তাই নয়, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত চর্বি, লবণ ও চিনির উপস্থিতিও স্বাস্থ্যহানির অন্যতম কারণ।
গবেষণায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, কলম্বিয়া, চিলি ও মেক্সিকোর খাদ্য তালিকা ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, কলম্বিয়া, ব্রাজিল ও চিলিতে অকাল মৃত্যুর ৪ থেকে ৬ শতাংশের জন্য দায়ী অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার। তবে কানাডায় এই হার ১০.৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩.৭ শতাংশ এবং ইংল্যান্ডে ১৩.৮ শতাংশ। এই আটটি দেশের মধ্যে ইংল্যান্ডেই এই হার সবচেয়ে বেশি।
গবেষকরা বলছেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি তাদের খাদ্যতালিকায় এই ধরনের খাবারের পরিমাণের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। যাদের খাদ্যে এই ধরনের খাবারের পরিমাণ বেশি, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও ততটাই বেশি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে মানুষের খাদ্যতালিকায় অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ অনেক বেশি। ইংল্যান্ডে ২০১৮-১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই ধরনের খাবার থেকে একজন মানুষ দৈনিক শক্তির ৫৩.৪ শতাংশ গ্রহণ করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৫৪.৫ শতাংশ।
গবেষকরা আরও বলছেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলো প্রক্রিয়াকরণের সময় ও কৃত্রিম উপাদান ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে রং, কৃত্রিম ফ্লেভার, মিষ্টি, ইমালসিফায়ার এবং অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে স্বাস্থ্যহানির এই চিত্রটি উন্নত দেশগুলোতে বেশি দেখা গেলেও, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেও এর প্রভাব বাড়ছে। তারা বিশ্বের সরকারগুলোকে খাদ্য বাজারজাতকরণে কঠোর নিয়মকানুন তৈরি, স্কুল ও কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের খাবারের বিক্রি নিয়ন্ত্রণ এবং অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের ওপর কর আরোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই গবেষণা ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো কিছু রোগের সঙ্গে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার বিদ্যমান প্রমাণগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অকাল মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেলেও, এটি সরাসরি একটির কারণে অন্যটি হয়—এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
আমাদের দেশেও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে। ফাস্ট ফুড, রেডি-টু-ইট খাবার, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস ও কোমল পানীয়ের প্রতি মানুষের ঝোঁক বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ। তাই, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য খাদ্য নির্বাচনে সচেতনতা বাড়ানো এবং টাটকা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
তথ্য সূত্র: The Guardian