চীনের আগ্রাসন: বিতর্কিত জলসীমায় পতাকা, ফিলিপাইনের সঙ্গে কি যুদ্ধ?

দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের সার্বভৌমত্ব জাহির করতে চীন ও ফিলিপাইন দুটি দেশই বিতর্কিত একটি বালুচরে তাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য সংঘাতের কারণ হতে পারে।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ফিলিপাইনের সামরিক ঘাঁটি সংলগ্ন স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত তিনটি জনমানবহীন বালুচর, যা স্যান্ডি কে (ফিলিপাইনের কাছে পরিচিত) বা তিয়েক্সিয়ান রিফ (চীনের কাছে পরিচিত), সেখানে এই ঘটনা ঘটে। উভয় দেশই এই অঞ্চলের উপর নিজেদের অধিকার দাবি করে।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৃহত্তম বার্ষিক যৌথ সামরিক মহড়ার মাঝেই এই ঘটনা ঘটল। এর কয়েক সপ্তাহ আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি এই অঞ্চলে চীনের আগ্রাসন মোকাবিলায় ফিলিপাইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোট আরও জোরদার করবেন।

চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু অংশ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। বেইজিং আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে এই জলপথের প্রায় পুরোটার মালিকানা দাবি করে।

গত দুই দশকে, চীন দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের উপকূল থেকে দূরে বেশ কয়েকটি প্রবাল প্রাচীর ও প্রবালদ্বীপ দখল করে সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে, যার মধ্যে রানওয়ে এবং বন্দরও রয়েছে।

স্যান্ডি কে-কে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে এই পতাকা উত্তোলনের প্রতিযোগিতা ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসঙ্গে, এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটিরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রুখতে তাদের মনোযোগ ও সম্পদ ব্যয় করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

গত সপ্তাহে, চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দাবি করে যে, তারা এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিয়েক্সিয়ান রিফের ওপর “সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ” প্রতিষ্ঠা করেছে এবং “সার্বভৌম অধিকার প্রয়োগ” করেছে। এরপর, চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে শনিবারে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, চারজন চীনা সেনা সাদা বালুচরে হেঁটে যাচ্ছেন এবং পঞ্চম একজন একটি নৌকার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

অন্য একটি ছবিতে দেখা যায়, চারজন সেনা চীনের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন, যা সম্প্রচারমাধ্যমটি “সার্বভৌমত্বের প্রতীক” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিপাইন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তারা বেশ কয়েকটি বালুচরে দল পাঠায়। ফিলিপাইনের কোস্টগার্ডের একজন মুখপাত্র জানান, রোববার দেশটির নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং পুলিশ চারটি দলে বিভক্ত হয়ে রাবার বোটে করে পাগা-আসা কে ১, কে ২ এবং কে ৩-এ যায়, যা ফিলিপাইন স্যান্ডি কে-কে বোঝাতে ব্যবহার করে।

আন্তঃসংস্থা অভিযানের সময়, কর্মকর্তারা কাছেই একটি চীনা কোস্টগার্ড জাহাজ এবং সাতটি চীনা নৌ-সামরিক জাহাজের “অবৈধ উপস্থিতি” লক্ষ্য করেন। ফিলিপাইনের কোস্টগার্ডের মুখপাত্র জে তারিয়েলা তার এক্স হ্যান্ডেলে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায়, পাঁচজন কর্মকর্তা একটি সাদা বালুচরে জাতীয় পতাকা ধরে আছেন।

রবিবার রাতে, চীনের কোস্টগার্ডের একজন মুখপাত্র জানান, ফিলিপাইনের ছয়জন সেনা চীনের “সতর্কতা ও নিরুৎসাহ” সত্ত্বেও “অবৈধভাবে” তিয়েক্সিয়ান রিফে প্রবেশ করেছে। মুখপাত্র আরও বলেন, চীনের কোস্টগার্ডের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা “অবিলম্বে” পরিস্থিতি যাচাই করতে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বালুচরে প্রবেশ করে। তিনি ফিলিপাইনকে “অবিলম্বে তাদের অনধিকার প্রবেশ বন্ধ করার” আহ্বান জানান।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তারিয়েলা বলেন, প্রতিটি দল বালুচরে ছবি তোলার জন্য একটি করে ফিলিপাইনের পতাকা নিয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, “আমাদের অভিযানের অন্য উদ্দেশ্য ছিল, চীনা সরকার সেখানে কোনো অবকাঠামো বা নজরদারির যন্ত্র স্থাপন করেছে কিনা, তা পরীক্ষা করা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিতর্কিত জলসীমায় চীন ও ফিলিপাইনের মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে জড়িয়ে বিশ্বব্যাপী সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। কারণ, ম্যানিলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে।

উল্লেখ্য, স্যান্ডি কে, থিটু দ্বীপের কাছে অবস্থিত, যা ম্যানিলার কাছে পাগা-আসা দ্বীপ নামে পরিচিত এবং এখানে ফিলিপাইনের একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জলপথে চীনের আগ্রাসন মোকাবিলায় ২০২৩ সালে ম্যানিলা সেখানে একটি কোস্টগার্ড পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *