আতঙ্কে কেঁদেছিলেন কিম! প্যারিসের সেই ভয়ঙ্কর ডাকাতির বিচার শুরু

প্যারিসের আদালতে ২০১৬ সালে মার্কিন তারকা কিম কার্দাশিয়ানের কোটি ইউরোর গহনা চুরির ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ‘দাদু ডাকাত’ নামে পরিচিত ১০ জন ব্যক্তির বিচার চলছে, যাদের বয়স ৩৫ থেকে ৭৮ বছরের মধ্যে।

ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম এই দলের সদস্যদের ‘দাদু ডাকাত’ নামে অভিহিত করেছে। প্যারিসের একটি আদালতে এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে আগামী মে মাসে কিম কার্দাশিয়ানকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৩রা অক্টোবর, গভীর রাতে প্যারিসে ফ্যাশন শো’তে যোগ দিতে আসা কিম কার্দাশিয়ানকে তার হোটেল কক্ষে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা জিম্মি করে, যারা পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। ডাকাতরা প্রায় ১০ মিলিয়ন ইউরোর (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১১৮ কোটি টাকার বেশি) গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।

এই ঘটনার পর কিম তার টেলিভিশন শো’তে বলেছিলেন, মুখোশ পরা বন্দুকধারীরা তাকে ধর্ষণ ও হত্যা করতে চেয়েছিল।

আদালতে অভিযুক্তদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে এবং তাদের পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে। তাদের মধ্যে ‘ওল্ড ওমর’ ও ‘ব্লু আইজ’-এর মতো ডাকনামও প্রচলিত আছে, যা ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকের ফরাসি সিনেমার ডাকাতদের কথা মনে করিয়ে দেয়।

সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, অভিযুক্তরা সশস্ত্র ছিল এবং প্যারিসের একটি বারে বৈঠকের পর তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই অপরাধ সংঘটিত করে।

ঘটনার সময় কিম কার্দাশিয়ানের কোনো নিরাপত্তা ছিল না। তিনি একটি বিশেষ ভবনে ছিলেন, যেখানে তার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিরা প্রায়ই বিলাসবহুল স্যুট ভাড়া করে থাকেন।

জানা গেছে, ঘটনার দিন কিমের বডিগার্ড তার বোন কোর্টনি কার্দাশিয়ানের সঙ্গে একটি নাইটক্লাবে গিয়েছিলেন।

কিম কার্দাশিয়ান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার গতিবিধি এবং গহনার ছবি প্রায়ই প্রকাশ করতেন। এমনকি, তিনি তার তখনকার স্বামী, র‍্যাপার কানইয়ে ওয়েস্টের দেওয়া প্রায় ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি হীরার আংটিও সেখানে দেখিয়েছিলেন।

ধারণা করা হয়, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এসব তথ্য ডাকাতদের কাছে সহজ টার্গেট করে তুলেছিল।

অভিযোগ অনুযায়ী, পাঁচজন সশস্ত্র ব্যক্তি বাইসাইকেল বা পায়ে হেঁটে এসে ভোর ২টার দিকে পুলিশের পোশাক পরে ওই ভবনে প্রবেশ করে। তারা সেখানকার রিসেপশনিস্টকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কিমের কক্ষে যেতে বাধ্য করে।

এরপর তারা কিমের হাত-পা বেঁধে এবং মুখ টেপ দিয়ে আটকে দেয়। ১০ মিনিটেরও কম সময়ে তারা আংটিসহ অন্যান্য গহনা নিয়ে পালিয়ে যায়।

২০২০ সালে ডেভিড লেটারম্যানের একটি অনুষ্ঠানে কিম কার্দাশিয়ান বলেছিলেন, তিনি ভেবেছিলেন তাকে ধর্ষণ করা হবে এবং মেরে ফেলা হবে।

তিনি বলেছিলেন, “আমি ভাবছিলাম, এই বুঝি আমার ধর্ষণের সময়, আর আমরা হয়তো মরে যাব। আমি তাদের বলেছিলাম, আমার সন্তান আছে, আমার স্বামী আছে, আমার পরিবার আছে।”

এই ঘটনার পর ফ্রান্সে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং এই ডাকাতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ তদন্তের পর ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

তাদের মধ্যে একজন গত মাসে মারা গেছেন এবং অন্যজনের স্বাস্থ্যগত কারণে পৃথক বিচার হবে।

প্যারিসের আদালতে বিচারাধীন ১০ জনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ডাকাতি, একটি অপরাধ চক্রের সদস্য হওয়া এবং অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ডাকাতির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তার অভিযোগেও অভিযুক্ত।

অভিযুক্তদের মধ্যে আটজন তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তবে, ৭১ বছর বয়সী ইউনিস আব্বাস নামের একজন তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি সেই দলের অংশ ছিলেন যারা কিমের কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন এবং নিচে পাহারায় ছিলেন।

তিনি আরও জানান, তিনি এর আগে ডাকাতির দায়ে ২০ বছর জেল খেটেছেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না।

আমাকে বলা হয়েছিল, সেখানে একটি ২০ ক্যারেটের হীরা আছে, যার কোনো নিরাপত্তা নেই… বিষয়টি লোভনীয় ছিল।”

আব্বাস

তিনি আরও জানান, ঘটনার সময় তিনি জানতেন না তারা কাকে ডাকাতী করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, তিনি একজন র‍্যাপারের স্ত্রী। আমি কোনো প্রশ্ন করিনি… আমি তাকে একজন ভুক্তভোগী হিসেবে দেখি; তার প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ ছিল না।”

আরেক অভিযুক্ত, ৬৮ বছর বয়সী ওমার আইত খেদাশে, যিনি ‘ওল্ড ওমর’ নামে পরিচিত, তিনিও ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন— সরকারি কৌঁসুলিদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি কিমকে বেঁধেছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।

এই মামলায় কিমের দীর্ঘদিনের প্যারিসের ড্রাইভারের ভাই গ্যারি মাদারও অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে কিমের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তিনি তার সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন।

কিমের আইনজীবী মাইকেল রোডস জানিয়েছেন, কিম কার্দাশিয়ান চান এই বিচার যেন ফরাসি আইন অনুযায়ী এবং সকল পক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়।

কিম কার্দাশিয়ানের আগামী ১৩ই মে সাক্ষ্য দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং ২৩শে মে পর্যন্ত এই বিচার চলবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *