বন্ধুত্ব নাকি বিভীষিকা? ক্যাসির হত্যাকারীরা এখন কেমন আছে?

প্রায় দুই দশক আগে, আমেরিকার আইডাহো অঙ্গরাজ্যের একটি মর্মান্তিক ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল পুরো বিশ্বকে। ২০০৬ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর, ১৬ বছর বয়সী ক্যাসি জো স্টডার্ট-কে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল তারই স্কুলের দুজন সহপাঠী, যাদের ‘স্ক্রিম কিলার্স’ নামে অভিহিত করা হয়।

এই নৃশংস ঘটনার স্মৃতি আজও তাজা, এবং এই ঘটনার শিকার ক্যাসি জো স্টডার্টের হত্যাকারীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ঘটনার দিন, ক্যাসি তার আত্মীয়দের বাড়িতে ছিল, কারণ তারা বাইরে ছিলেন। সেই সুযোগে তার দুই বন্ধু, টোরি অ্যাডামসিক এবং ব্রায়ান ড্রাপার, যারা ছিল ক্যাসির সহপাঠী, গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে তাকে হত্যা করে।

তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ‘স্ক্রিম’ নামক একটি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি নৃশংস অপরাধ করা। তারা চেয়েছিল এই ঘটনার মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করতে।

হত্যাকাণ্ডের পরে, পুলিশ দ্রুত তদন্ত শুরু করে। সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে ক্যাসির প্রেমিক এবং আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু পরে, তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে ঘটনার রাতে অ্যাডামসিক এবং ড্রাপার ক্যাসির বাড়িতে গিয়েছিল।

তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায়, পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে।

প্রথমে তারা ঘটনার কথা অস্বীকার করে, কিন্তু পরে পুলিশের জেরার মুখে তারা তাদের অপরাধের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়। তারা জানায়, তারা আগে থেকেই ক্যাসিকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

ঘটনার দিন তারা একটি ভিডিও তৈরি করে, যেখানে তাদের এই পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়। এই ভিডিওটি ছিল তাদের অপরাধের প্রমাণ।

আদালতে বিচার শেষে, টোরি অ্যাডামসিক এবং ব্রায়ান ড্রাপারকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এবং প্যারোলের কোনো সম্ভাবনা নেই।

বর্তমানে তারা তাদের সাজা ভোগ করছে।

এই ঘটনার পর ক্যাসির পরিবার গভীর শোকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ক্যাসির ভাই, অ্যান্ড্রু, তার বোনের মৃত্যু নিয়ে বলেন, “এই ঘটনা আমাদের সবার জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আমরা এখনো সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি।”

ক্যাসির মা, আনা, যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০২২ সালে মারা যান, তিনি তার মেয়ের হত্যাকারীদের ক্ষমা করতে পারেননি।

ব্রায়ান ড্রাপার, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন, তিনি তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি প্রতিদিন আমার জীবনের এই ভুলের জন্য অনুতপ্ত হই।”

তিনি আরও জানান, কিশোর বয়সে তিনি একাকিত্ব বোধ করতেন এবং নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করতেন।

এই ঘটনার পর, সমাজে কিশোর অপরাধ এবং এর কারণগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের প্রতি সমাজের মনোযোগ কতটা জরুরি।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *