খাবারে কৃত্রিম রং-এর বদলে: কেমন হবে পোকা ও বিটের রসের খেলা?

খাবার রঙে প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য প্রস্তুতকারকদের প্রতি আহ্বান।

যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য উৎপাদন শিল্পে কৃত্রিম রং ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত বাড়ছে। ভোক্তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে খাদ্য প্রস্তুতকারকদের উপর চাপ বাড়ছে, যা তাদের পণ্যে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের দিকে উৎসাহিত করছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস।

দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য সামগ্রীতে উজ্জ্বল রং যোগ করতে কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে সেই ধারা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ, সম্ভাব্য বিধিনিষেধ এবং ভোক্তাদের চাহিদা অন্যতম। খাদ্য প্রস্তুতকারকরা এখন তাদের পণ্যে প্রাকৃতিক রং ব্যবহারের উপায় খুঁজছেন।

এই পরিবর্তনের পথে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাকৃতিক রংয়ের সরবরাহ সীমিত, কৃত্রিম রংয়ের চেয়ে এর উৎপাদন খরচ বেশি, রংয়ের স্থায়িত্ব বজায় রাখা কঠিন এবং ভোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণে সমস্যা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় দেখা যায়, একটি পণ্যে কৃত্রিম রং ব্যবহার করার ফলে যে উজ্জ্বলতা আসে, প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করলে সেই একই ফল পাওয়া যায় না।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট্রাল টেকনোলজিস কর্পোরেশন’ (Sensient Technologies Corp.) এর মতো কোম্পানিগুলো খাদ্য উৎপাদনকারীদের জন্য প্রাকৃতিক রং তৈরির চেষ্টা করছে। তারা বিটের রস, গাজরের রস, শৈবাল এবং এমনকি ‘কোচিনিয়াল’ নামক এক ধরনের পোকা ব্যবহার করে রং তৈরি করছে। এই পোকা থেকে পাওয়া কারমাইনিক অ্যাসিড ব্যবহার করে উজ্জ্বল লাল রং তৈরি করা হয়।

তবে, প্রাকৃতিক রং তৈরি করা সহজ নয়। এই রংগুলো তৈরি করতে সময় লাগে এবং এর উৎপাদন প্রক্রিয়াও বেশ জটিল। উদাহরণস্বরূপ, একটি পণ্যে কৃত্রিম রংয়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করতে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক রংয়ের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

ইতিমধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা খাদ্য কোম্পানিগুলোকে ২০২৬ সালের মধ্যে তাদের পণ্য থেকে কৃত্রিম রং অপসারণের জন্য উৎসাহিত করছেন। কিছু কোম্পানি এরই মধ্যে তাদের পণ্যে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার শুরু করেছে। খাদ্য ও পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি পেপসিকো (PepsiCo) জানিয়েছে, তাদের ‘লে’স’ (Lay’s) এবং ‘তোস্তিতোস’ (Tostitos) ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ কৃত্রিম রং ব্যবহার বন্ধ করা হবে।

তবে, এই পরিবর্তন সব সময় সহজ হয় না। এর একটি উদাহরণ হলো ‘জেনারেল মিলস’-এর (General Mills) ‘ট্রিক্স’ সিরিয়াল। ২০১৬ সালে ভোক্তাদের আগ্রহের কারণে কোম্পানিটি সিরিয়াল থেকে কৃত্রিম রং সরিয়ে হলুদ, স্ট্রবেরি ও মুলা থেকে তৈরি প্রাকৃতিক রং ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু ভোক্তারা তাদের পরিচিত উজ্জ্বল রং এবং স্বাদ পছন্দ না করায় ২০১৭ সালে কোম্পানিটি আবার আগের রূপে ফিরে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যপণ্যে রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো পণ্যের রং পরিবর্তন করলে অনেক সময় ভোক্তারা তা গ্রহণ করতে চান না। তাই, খাদ্য প্রস্তুতকারকদেরকে এই পরিবর্তনের বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) জানিয়েছে, তারা অনুমোদিত রংগুলি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ বলে মনে করে। তবে, স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য থেকে কৃত্রিম রং অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের মতে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই রং শিশুদের মধ্যে অতিসক্রিয়তা এবং মনোযোগের অভাবের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

খাদ্যে কৃত্রিম রংয়ের ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। তবে, খাদ্য প্রস্তুতকারকদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কীভাবে প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা যায় এবং একই সঙ্গে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা যায়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *