মার্কিন-চীন দ্বন্দ্বে বিভক্ত বিশ্ব! দেশগুলো কি পারবে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান তীব্র অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বে বিশ্বজুড়ে দেশগুলোকে এখন পক্ষ বেছে নিতে হচ্ছে। একদিকে যেমন বাণিজ্যের প্রশ্নে দেশগুলো আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে, তেমনই চীনের সঙ্গেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে।

এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশই উভয়পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে কৌশল অবলম্বন করছে।

গত কয়েক বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন চীনা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক (ট্যারিফ) আরোপ করেছেন, যার প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে।

এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং অনেক দেশই এখন এই দুই পরাশক্তির মধ্যে নিজেদের অবস্থান নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশগুলোকে এখন হয় আমেরিকার শর্ত মেনে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে, অথবা উচ্চহারে আমদানি শুল্কের সম্মুখীন হতে হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নীতির কারণে চীন এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছে। তারা নিজেদেরকে একটি স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে তুলে ধরছে।

এর মূল উদ্দেশ্য হলো, মার্কিন শুল্কের প্রভাব থেকে বাঁচা এবং আমেরিকার বাজার-খুঁজে অন্য বাজার তৈরি করা।

এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওয়ং-এর একটি মন্তব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, “আমেরিকা ও চীন এখন বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত।

উভয় শক্তিই চায় না যে দেশগুলো পক্ষ বেছে নিক, তবে বাস্তবে প্রত্যেকেই অন্যদের নিজেদের দিকে টানতে চাইছে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদিও কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের হার কমিয়েছে, তবে চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক হয়নি।

চীনও এই পরিস্থিতিতে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে। তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চাইছে।

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন এবং এই দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে চুক্তি করেছেন।

অন্যদিকে, জাপানসহ অন্যান্য দেশগুলোকেও চীন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, চীন এখন বিভিন্ন দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতেও নিষেধ করছে।

এমনটা হলে চীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন এখন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরো গভীর করতে চাইছে।

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লি চেং-এর মতে, “মানুষ এখন আমেরিকার উপর আস্থা হারাচ্ছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর। এই পরিস্থিতিতে চীন লাভবান হচ্ছে।”

অন্যদিকে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষ করে, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে (supply chain) সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার এই দ্বন্দ্বে অনেক দেশই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।

কারণ তাদের একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে, যা তাদের আমদানি ও উৎপাদনের জন্য জরুরি, তেমনই আমেরিকার বিশাল বাজারেও প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।

ইউরোপে চীন বাণিজ্য চুক্তি পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো ইউরোপীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন চীনের সঙ্গে মিলে বহুপাক্ষিকতাকে (multilateralism) সমর্থন করে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করছেন।

তিনি বলেছেন, চীনের বাজার সবসময়ই বিভিন্ন দেশের জন্য খোলা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন এই বাণিজ্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

তারা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল তৈরি করেছে।

চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত এবং বিশ্বায়নের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *