পশ্চিম অস্ট্রিয়ার আল্পস পর্বতমালায় অবস্থিত বাদ গ্যাস্টাইন, এক মনোরম সৌন্দর্যের লীলাভূমি। শত শত বছর ধরে এই অঞ্চলের উষ্ণ প্রস্রবণগুলি মানুষের কাছে এক বিশেষ আকর্ষন।
এ একদিকে যেমন এর প্রাকৃতিক শোভা মুগ্ধ করে, তেমনই এখানকার খনিজ সমৃদ্ধ জল নানা রোগের উপশমে সহায়ক। বাংলাদেশের মানুষের কাছেও এই স্থানটি একটি বিশেষ গন্তব্য হতে পারে, যেখানে প্রকৃতির নিরাময় ক্ষমতাকে অনুভব করা যায়।
বাদ গ্যাস্টাইনের প্রধান আকর্ষণ হল এর উষ্ণ প্রস্রবণগুলি। এখানকার জল ৫ মিলিয়ন লিটার পর্যন্ত প্রতিদিন ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে, যার তাপমাত্রা প্রায় ৪৪ থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
এই জলে রয়েছে মূল্যবান খনিজ উপাদান, যা শরীরের জন্য উপকারী। রোমান সম্রাট থেকে শুরু করে শিল্পী, সাহিত্যিক—সকলেই একসময় এই উষ্ণ জলের স্রোতে গা ডুবিয়েছেন। এখানকার স্থাপত্যও সেই সময়ের সাক্ষ্য বহন করে।
মার্বেল পাথরের কারুকার্যখচিত, ঝাড়বাতি সজ্জিত পুরনো ভিলাগুলি যেন এক অন্য জগৎ তৈরি করে।
তবে, বাদ গ্যাস্টাইন শুধু উষ্ণ প্রস্রবণের জন্যই বিখ্যাত নয়। এখানকার পার্বত্য দৃশ্যও পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানকার উচ্চতা ১,১১৯ ফুট-এরও বেশি, যা এটিকে ইউরোপের অন্যতম সুন্দর স্থানগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। এখানকার বনভূমি আর সবুজ ঘাস আচ্ছাদিত পাহাড়গুলি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক একটি ছবি।
এখানকার স্টুবারনগেলের কেবল কারে চড়ে আপনি পাহাড়ের উপরে উঠতে পারেন, যেখান থেকে অস্ট্রিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গ্রসগ্লকনারের (Grossglockner) মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। ট্রেকিং ভালোবাসেন এমন মানুষের জন্যেও এখানে রয়েছে একাধিক পথ।
বাদ গ্যাস্টাইনের জলের সঙ্গে এখানকার মাটিরও রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। এখানকার বকহার্টসি হ্রদের (Bockhartsee) শীতল জলে ডুব দিলে মন জুড়িয়ে যায়।
এই অঞ্চলের বকস্টেইন গ্রামের রাডহাউসবার্গ (Radhausberg) পাহাড়ে একসময় সোনার খনি ছিল। কথিত আছে, এখানে পাওয়া যাওয়া রেডন গ্যাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
এখানে গ্যাস্টেইনার হিলস্টোলেন (Gasteiner Heilstollen) হেলথ সেন্টারে, আপনি এই রেডন সমৃদ্ধ জল এবং বাতাসের মাধ্যমে চিকিৎসার সুযোগ পেতে পারেন। এখানকার স্পাগুলিতেও এই উষ্ণ প্রস্রবণের জল ব্যবহার করা হয়, যা শরীরকে শিথিল করে এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই ধরনের স্পা এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসার ধারণা নতুন নাও হতে পারে। আমাদের দেশেও বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার করে চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে।
বাদ গ্যাস্টাইনের অভিজ্ঞতা, আমাদের দেশের মানুষের জন্যেও স্বাস্থ্যকর পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এটি কেবল একটি ভ্রমণের স্থান নয়, বরং প্রকৃতির সান্নিধ্যে সুস্থ জীবন যাপনের এক অসাধারণ সুযোগ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক