যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা: ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ইরানের!

ইরানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা বানচাল করার চেষ্টা করছে ইসরায়েল। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সোমবার এক বিবৃতিতে জানান, তেহরানের পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় হস্তক্ষেপ করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ওমানের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বৈঠকের পর নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার দাবি জানান। আরাকচি এক টুইট বার্তায় বলেন, “ইসরায়েলের ধারণা, ইরান কী করতে পারবে আর কী পারবে না, তা তারা নির্ধারণ করবে, যা বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে।”

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনার তৃতীয় দফা বৈঠকের পর ওমান থেকে ফিরে আরাকচি ‘সতর্কতামূলক’ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সপ্তাহান্তে আলোচনা ভালোভাবেই এগিয়েছে। তবে, এই আলোচনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, এই আলোচনার ফল তখনই ভালো হবে, যখন ইরানের পরমাণু অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেছেন, ইরানের সঙ্গে কোনো পরমাণু চুক্তি হলে, তেহরানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা থেকেও বিরত রাখতে হবে। ট্রাম্প অবশ্য এর আগে জানিয়েছিলেন, তিনি মনে করেন একটি চুক্তি হতে পারে। তিনি আরও যোগ করেন, নেতানিয়াহু হয়তো যুদ্ধে যেতে চাইবেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়াতে চাইছে না। তবে, চুক্তি না হলে যুক্তরাষ্ট্রও ‘প্রস্তুত’ থাকবে।

উল্লেখ্য, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইরানের সঙ্গে হওয়া পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন। এরপর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া আরও জোরদার করে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এদিকে, চলমান আলোচনার মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইএইএ-র একটি কারিগরি দল তেহরানে এসেছে এবং তারা ইরানের পরমাণু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে। আরাকচি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে আইএইএ অংশ নিতে পারে। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাইদি জানিয়েছেন, আগামী শনিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এখনো স্থান চূড়ান্ত হয়নি।

পরমাণু আলোচনা নিয়ে ইসরায়েলের অসন্তোষের মধ্যে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শনিবার ইরানের বন্দর আব্বাসের কাছে অবস্থিত শাহীদ রাজার বন্দর-এ একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে, ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রের জ্বালানি বহনের কারণে এই বিস্ফোরণ হয়েছে এমন খবর ভিত্তিহীন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা সোমবার জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে, আহত হয়েছেন ১৩৮ জন।

অন্যদিকে, ইরানের অবকাঠামো বিষয়ক যোগাযোগ সংস্থা জানিয়েছে, তারা একটি ‘ব্যাপক ও জটিল’ সাইবার হামলা প্রতিহত করেছে। ইরানের আধা-সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সি এই খবর প্রকাশ করেছে। অতীতে ইরান ইসরায়েলকে এ ধরনের সাইবার হামলার জন্য দায়ী করেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *