যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা: ইউক্রেনে বিজয় দিবসে রাশিয়ার আকস্মিক পদক্ষেপ!

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে রাশিয়া, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় দিবস উপলক্ষে। আগামী ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।

ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়েছে, ৮ মে স্থানীয় সময় অনুযায়ী মধ্যরাত থেকে এই যুদ্ধবিরতি শুরু হবে এবং ১০ মে পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। মূলত, নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে ৯ মের বিজয় দিবস পালিত হয়।

এই উপলক্ষে মানবিকতার খাতিরে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন পুতিন। তবে, ইউক্রেন এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতেও ইউক্রেন সম্মতি জানিয়েছিল। তবে, সেই প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে।

রুশ কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন যদি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে, তাহলে রাশিয়াও এর উপযুক্ত জবাব দেবে।

যুদ্ধবিরতির এই ঘোষণার আগে, উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনের ১১৯টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

অন্যদিকে, সোমবার সকালে ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্রুত এই যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করা হলেও, উভয়পক্ষের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস এবং সমঝোতার অভাব দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও জানিয়েছেন, এই সপ্তাহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা এই প্রচেষ্টায় আরও কত দিন জড়িত থাকতে চায়।

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি স্বাক্ষরের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের মতে, আলোচনা চললেও রুশ বাহিনী এখনো ইউক্রেনের বেসামরিক এলাকাগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, পশ্চিমা দেশগুলি মনে করছে, রাশিয়া সম্ভবত আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করছে, যাতে তারা ইউক্রেনের আরও বেশি ভূখণ্ড দখল করতে পারে।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সম্প্রতি মার্কিন সিনেটর মার্ক রুবিও’র সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাঁরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে।

তবে, ইউক্রেন এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে তাদের ভূমি ছাড়তে রাজি নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হয়তো ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে।

এছাড়াও, ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শমিহাল জানিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি খনিজ চুক্তি করতে ভালোভাবেই এগোচ্ছেন।

ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে এই যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রূপ নিয়েছে, যা শান্তি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *