ছোট্ট গ্রাম থেকে বিশ্ব জয়! আর্নে স্লটের কোচিংয়ের অজানা কাহিনী!

আর্নে স্লট: শৈশব থেকে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন কোচের পথে

ফুটবল বিশ্বে কোচিংয়ের জগতে এক নতুন তারকার আগমন ঘটেছে। নেদারল্যান্ডসের এই তরুণ কোচ, আর্নে স্লট, যিনি সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, তাঁর কোচিং জীবনের গল্পটা রূপকথার চেয়ে কম নয়।

খেলোয়াড় জীবন তেমন উজ্জ্বল না হলেও, মাঠের বাইরে কৌশল সাজানোর মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তিনি দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন।

স্লটের কোচিং জীবনের শুরুটা হয় নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব কাম্বুরে সহকারী কোচ হিসেবে। তখন তাঁর গুরু ছিলেন হেনক ডি ইয়ং। ডি ইয়ংয়ের অধীনে কাজ করার সময়ে স্লট পেপ গার্দিওলার কৌশল ও ট্যাকটিক্সের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন।

গার্দিওলার খেলার ভিডিও সংগ্রহ করে, তিনি তা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করতেন। ডি ইয়ং একবার মজা করে বলেছিলেন, “স্লট সবসময় গার্দিওলার কথা বলত। যেন গার্দিওলার সব খেলার ভিডিও তার মুখস্থ।”

স্লটের বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডসের বার্গেনটাইম নামের একটি ছোট শহরে, যা রক্ষণশীলতার জন্য পরিচিত। তাঁর বাবা, অ্যারেন্ড স্লটও ছিলেন একজন ফুটবলার ও কোচ। বাবার কাছ থেকেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ও কৌশলগত ধারণা পান আর্নে।

বাবার দল, ভিভি বার্গেনটাইম-এর খেলা দেখতে নিয়মিত মাঠে যেতেন তিনি। ছোট বয়সেই খেলার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তাঁর চোখে পড়ত।

বারবার খেলোয়াড় বদলের কৌশল থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে বের করা— সবকিছুতেই বাবার অনুকরণ করতেন আর্নে। এমনকি খেলার সময় বাবার পাশে বসে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলতেন, যা তাঁর ভেতরের কোচকে আরও শাণিত করে তোলে।

কাম্বুরের পর তিনি এজেড আলকামার ক্লাবে সহকারী এবং পরে প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আসে ফেইয়েনুর্দের হয়ে ডাচ লিগ জেতার সুযোগ। ২০২৩ সালে তিনি পিএসভি ও আয়াক্সের মতো শক্তিশালী দলগুলোকে হারিয়ে লিগ চ্যাম্পিয়ন হন।

এই জয় তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

স্লটের কোচিং দর্শনে তাঁর শৈশবের অনেক ছায়া বিদ্যমান। ডি ইয়ং মনে করেন, “কাম্বুর এমন একটি ক্লাব যেখানে খারাপ খেললে সমর্থকেরা ছেড়ে কথা বলে না। রটারডাম ও লিভারপুলের মতো এখানকার মানুষও কঠোর পরিশ্রমী। আর্নে সবসময় ভালো ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে, যা দর্শকদের মন জয় করে।”

আর্নে স্লটের সাফল্যের পেছনে তাঁর বাবার অবদান অনস্বীকার্য। বাবার প্রশিক্ষণ এবং খেলার কৌশলগুলো অনুসরণ করে তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। বাবার কাছ থেকে পাওয়া কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা ও কৌশলগত জ্ঞান তাঁকে আজকের এই অবস্থানে এনে দিয়েছে।

আর্নে স্লটের উত্থান প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং কৌশলগত জ্ঞানের মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষও বিশ্ব ফুটবলে অসাধারণত্ব অর্জন করতে পারে। তাঁর এই যাত্রা তরুণ ফুটবলার ও কোচদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *