বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া কি স্বাভাবিক, নাকি উদ্বেগের কারণ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় আমরা দ্বিধায় পরে যাই। সামান্য কিছু ভুলে যাওয়া, যেমন চাবি খুঁজে না পাওয়া বা পরিচিত কারও নাম মনে করতে না পারা, সবসময় ভয়ের কারণ নয়।
তবে কিছু লক্ষণ আছে যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আসুন, জেনে নিই স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া (Dementia) এবং স্বাভাবিক ভুলে যাওয়ার মধ্যেকার পার্থক্যগুলো কী কী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতি কিছুটা দুর্বল হওয়া স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এজিং ফিউচারস ইনস্টিটিউট’-এর পরিচালক এবং মনোবিজ্ঞানী প্রফেসর ক্যরিন আনস্টি বলেন, “অনেক সময় খুব ক্লান্ত থাকলে বা মনোযোগের অভাব হলেও এমনটা হতে পারে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কোনো নাম মনে করতে না পারা বা চেনা জিনিস খুঁজে পেতে সমস্যা হওয়া—এগুলো স্বাভাবিক।”
তবে কিছু বিষয় আছে যা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যেমন, পরিচিত কোনো স্থানে পথ ভুলে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখতে না পারা, একই কথা বারবার বলা ইত্যাদি ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কগনিটিভ হেলথ ইনিশিয়েটিভ’-এর প্রধান এবং নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক অ্যামি ব্রডম্যান বলেন, “যদি দেখেন পরিচিত কোনো জায়গায় যেতে সমস্যা হচ্ছে, তবে সতর্ক হতে হবে।”
ডিমেনশিয়ার আরও কিছু লক্ষণ হলো—
- প্রায়ই জিনিসপত্র খুঁজে না পাওয়া বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে ভুলে যাওয়া।
- কথাবার্তার সময় শব্দ খুঁজে পেতে সমস্যা হওয়া বা ভুল শব্দ ব্যবহার করা।
- কাউকে একটি কথা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সেই একই কথা বলা।
- সাম্প্রতিক কোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এসব ক্ষেত্রে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, যদি পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যেও কেউ আপনার আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ডাক্তাররা মনে করেন, ডিমেনশিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এবং কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের অগ্রগতিকে ধীর করা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার চেষ্টা করা এক্ষেত্রে জরুরি।
এছাড়াও, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও স্মৃতি দুর্বল হতে পারে। কোভিড-১৯ (COVID-19) সংক্রমণের পরেও অনেকে ‘ব্রেইন ফগ’-এর শিকার হন, যার ফলে স্মৃতিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই, কোনো ধরনের স্মৃতি-সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃদু স্মৃতি দুর্বলতা (Mild Cognitive Impairment – MCI) সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের মধ্যে ১ জনের ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, সামান্যতম সন্দেহ দেখা দিলেও দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান