ভিডিও গেম সিনেমা: ব্লকবাস্টার জয়, সুপারহিরোদের বিদায় ঘণ্টা?

বর্তমান সময়ে হলিউডে সিনেমার জগৎ-এ সুপারহিরো নির্ভর চলচ্চিত্রের একচেটিয়া আধিপত্যের দিন বুঝি শেষ হতে চলেছে। মার্ভেল এবং ডিসি কমিকসের চরিত্রগুলো নিয়ে তৈরি সিনেমাগুলো বক্স অফিসে তেমন সুবিধা করতে পারছে না, সেখানে ভিডিও গেমের জগৎ থেকে উঠে আসা সিনেমাগুলো ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

মার্গট রবি এবং সিডনি সুইনির মতো জনপ্রিয় অভিনেত্রীরাও এখন ভিডিও গেম নির্ভর চলচ্চিত্রে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন, যা এই পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়।

হলিউডের সিনেমা নির্মাতারা এখন ভিডিও গেমের গল্পগুলোকে সিনেমার পর্দায় নিয়ে আসার দিকে ঝুঁকছেন। এর কারণ সম্ভবত দুটি—প্রথমত, সুপারহিরো সিনেমাগুলোর বাজার কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে।

দ্বিতীয়ত, ভিডিও গেমগুলোর বিশাল দর্শকশ্রেণী রয়েছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ‘সুপার মারিও ব্রোস. মুভি’, ‘সনিক দ্য হেজহগ’, এবং ‘মাইনক্রাফট মুভি’-এর মতো সিনেমাগুলো এরই মধ্যে ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে।

অতীতে অবশ্য ভিডিও গেমের সিনেমা তৈরি করা খুব একটা সহজ ছিল না। ‘সুপার মারিও ব্রোস’-এর প্রথম সিনেমাটি দর্শক ও সমালোচক কারো মন জয় করতে পারেনি।

‘টম্ব রাইডার’ ফ্র্যাঞ্চাইজি দুটি সিনেমার বেশি টেকেনি। ‘ডুম’-এর মতো অ্যাকশন গেমের সিনেমাগুলোও ব্যর্থ হয়েছিল।

তবে এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্মাতারা এখন মূল গেমের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে, তরুণ প্রজন্মের রুচি ও আগ্রহের কথা মাথায় রেখে সিনেমা বানাচ্ছেন।

ভিডিও গেমের সিনেমাগুলো শুধু বিনোদন জগতেই পরিবর্তন আনছে না, বরং সিনেমা নির্মাণের ধারণাকেও নতুন পথে চালিত করছে।

কমিকস-এর জগৎ থেকে আসা সুপারহিরো সিনেমাগুলোর বাইরে, ভিডিও গেমগুলো সিনেমার জন্য নতুন ধরনের গল্প এবং চরিত্র সরবরাহ করছে।

উদাহরণস্বরূপ, ‘দ্য লিজেন্ড অফ জেলডা’ সিনেমাটি ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর মতো ফ্যান্টাসি জগৎ তৈরি করতে পারে।

আবার ‘দ্য সিমস’ সিনেমাটি অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারের বদলে অন্য ধরনের গল্প বলতে পারে।

তবে, সব ভিডিও গেমের সিনেমাই যে সফল হবে, তা বলা কঠিন। ‘আনটিল ডন’-এর মতো কিছু সিনেমা ইতিমধ্যেই দর্শক-আলোচকদের হতাশ করেছে।

তাই, নির্মাতাদের খেয়াল রাখতে হবে, তাঁরা যেন জনপ্রিয়তার মোহে ভালো গল্পের সিনেমা বানানোর চেষ্টা থেকে দূরে সরে না যান।

কারণ, শেষ পর্যন্ত ভালো গল্পই দর্শকদের সিনেমা হলে ফেরাতে পারে।

ভিডিও গেমের সিনেমাগুলো ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।

তবে, এটা স্পষ্ট যে, হলিউডে সিনেমার বাজারের হিসাব-নিকাশ এখন নতুন করে শুরু হয়েছে। এই সিনেমাগুলো তরুণ প্রজন্মকে আবার হলমুখী করতে পারবে, নাকি তারা গেমিং কনসোলের পর্দাতেই বিনোদন খুঁজে নেবে—সেটা সময়ের হাতেই দেখা যাবে।

তথ্যসূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *