যুক্তরাষ্ট্রের একটি শহর, যা একসময় ছিল দূষণের আঁতুড়ঘর, কিভাবে প্রকৃতির কোলে ফিরে এসে ‘ন্যাশনাল পার্ক সিটি’র স্বীকৃতি অর্জন করলো?
১৯৬৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি অঙ্গরাজ্যের চ্যাটানোগা শহরটি ছিল ভয়াবহ দূষণের শিকার। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেলপথ এবং বিভিন্ন কারখানার অনিয়ন্ত্রিত নির্গমনের কারণে শহরটি দূষণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষ স্থানে ছিল।
কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এই শহরটি নিজেদের দূষণমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
সম্প্রতি, চ্যাটানোগা ‘ন্যাশনাল পার্ক সিটি’র স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম। এই স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা, ন্যাশনাল পার্ক সিটি ফাউন্ডেশন।
এই ফাউন্ডেশন মূলত শহর এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে। তারা সারা বিশ্ব থেকে সেই শহরগুলোকে এই স্বীকৃতি দেয়, যারা পরিবেশবান্ধব ও মানুষের বসবাসযোগ্য শহর গড়তে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করে।
আসলে, এই ‘ন্যাশনাল পার্ক সিটি’র স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টা।
১৯৭০-এর দশক থেকে শহরটি দূষণমুক্ত করতে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে আইন প্রণয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
এই সব উদ্যোগের ফলস্বরূপ, শহরটি এখন প্রকৃতির সাথে মিশে গেছে, যেন প্রকৃতিকে ছাপিয়ে যায়নি।
চ্যাটানোগার এই পরিবর্তনে স্থানীয় বাসিন্দাদের আগ্রহ ও সহযোগিতা ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শহরের মানুষ, বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা, ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় সরকার সবাই মিলে একটি সবুজ শহর গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
বর্তমানে, লন্ডন ও অ্যাডিলেইডের মতো চ্যাটানোগাও বিশ্বের তৃতীয় ‘ন্যাশনাল পার্ক সিটি’র মর্যাদা লাভ করেছে।
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি, সবুজ পরিবেশে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য চ্যাটানোগা আদর্শ স্থান। এখানে ৭০টিরও বেশি পার্ক ও প্রায় ৩৫ মাইল দীর্ঘ পথ রয়েছে, যা হেঁটে বা সাইকেলে ঘুরে উপভোগ করা যায়।
সাউথ চিকামাউগা ক্রিক গ্রিনওয়ে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান, যা জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর করিডোর দিয়ে গঠিত। এখানে প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ দেখা যায়।
এছাড়াও, স্ট্রিংগার্স রিজ-এর মতো সংরক্ষিত বনভূমি থেকে শহরের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। টেনিসি রিভারওয়াক ধরে হেঁটে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আসা যায়।
যারা শিল্প ও প্রকৃতির মেলবন্ধন দেখতে চান, তারা ব্লুফ ভিউ আর্ট ডিস্ট্রিক্টে যেতে পারেন, যেখানে নদীর ধারে ভাস্কর্য উদ্যান রয়েছে। লুকআউট মাউন্টেনে অবস্থিত ইনক্লাইন রেলওয়ে ধরে উপরে উঠলে পুরো শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
বস্তুত, চ্যাটানোগার এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, স্থানীয় জনগণের সহযোগিতা ও পরিবেশ রক্ষার সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি শহরকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তোলা সম্ভব। একই সাথে, এটি অন্যান্য শহরকেও, বিশেষ করে বাংলাদেশের শহরগুলোকে, সবুজ ও বাসযোগ্য নগরী গড়তে উৎসাহিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার