ব্রিটিশ শিল্পী জেরেমি ডেলারের তৈরি ‘নকল’ রোমান মোজাইক: উপকূলের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার এক ভিন্ন প্রয়াস।
যুক্তরাজ্যের উপকূলীয় শহর স্কারবোরোতে সম্প্রতি উন্মোচন করা হয়েছে শিল্পী জেরেমি ডেলারের একটি অভিনব শিল্পকর্ম। ‘ওয়াইল্ড আই’ নামের একটি উপকূলীয় শিল্প প্রকল্পের অংশ হিসেবে তৈরি এই মোজাইক, যা দেখতে অনেকটা প্রাচীন রোমান স্থাপত্যের মতো।
তবে শিল্পী নিজে একে ‘নকল’ আখ্যা দিয়েছেন, যা দর্শকদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
ডেলারের এই মোজাইক তৈরিতে সাহায্য করেছেন শিল্পী কোরালি টার্পিন। এটি তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে, যেন মনে হয় সমুদ্রের কাছাকাছি কোনো এক স্থানে রোমান সভ্যতার কোনো নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে।
মোজাইকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্কারবোরোর স্থানীয় বিভিন্ন উপাদান, যেমন – সমুদ্রের প্রাণী, একটি বিশাল তিমি মাছ, এবং এমনকি ২০১৮ সালে শহরটিতে আসা একটি অতিকায় “ওয়ালরাস” (এক প্রকার সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী)।
এছাড়াও, একটি জাহাজের পতাকায় হাসিখুশি মুখের ছবি (smiley face) যুক্ত করে শিল্পী তার শৈল্পিকতার পরিচয় দিয়েছেন।
আসলে, স্কারবোরোর এই অঞ্চলে একসময় একটি সিগন্যাল স্টেশন ছিল, যা সমুদ্র পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতো। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এখানকার জীববৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করাই হলো এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
ডেলারের মতে, এই মোজাইকটি একশ বছর পর, যখন এটি সমুদ্রের নিচে চলে যাবে, তখন হয়তো কেউ এটিকে সত্যি সত্যিই কোনো রোমান স্থাপত্যের অংশ হিসেবে আবিষ্কার করবে!
‘ওয়াইল্ড আই’ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির গভীর সম্পর্ক তৈরি করা। ইয়র্কশায়ার ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্টের সহযোগিতায় ‘ইনভিজিবল ডাস্ট’ নামক একটি অলাভজনক সংস্থা এই প্রকল্পের আয়োজন করেছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য শিল্পীরাও স্কারবোরোর প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সংযোগ স্থাপন করতে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন।
এই তালিকায় রয়েছেন রায়ান গ্যান্ডার, পল মরিসন, শেজাদ দাওয়ুদ এবং এমা স্মিথ।
উদাহরণস্বরূপ, পল মরিসনের তৈরি সামুদ্রিক শৈবালের ভাস্কর্যটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি সমুদ্রের পানিতে কার্বন শোষণকারী শৈবালের গুরুত্ব তুলে ধরে।
এই ধরনের শিল্পকর্মের মাধ্যমে, পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতি মানুষের ভালোবাসা জাগিয়ে তোলাই এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য।
ডেলারের এই মোজাইক, যা একদিকে যেমন আনন্দদায়ক, তেমনই প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতিচ্ছবিও বহন করে।
এটি যেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতা এবং পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian