যুদ্ধ: ‘এখানে এসো না’, চীনাদের প্রতি ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি!

চীনের নাগরিকরা: ইউক্রেন যুদ্ধে দুই পক্ষের যোদ্ধা। ইউক্রেন যুদ্ধ যখন চলছে, তখন এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশের মানুষ।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হলো চীনের নাগরিক। রাশিয়ার হয়ে যেমন তারা লড়ছে, তেমনই ইউক্রেনের পক্ষেও লড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের।

এই দুই পক্ষের যোদ্ধাদের অভিজ্ঞতা, তাদের যুদ্ধ করার কারণ এবং চীন সরকারের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে চীনের নাগরিকদের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে যখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, তারা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা বেশ কয়েকজন চীনা নাগরিককে আটক করেছেন।

তিনি আরও দাবি করেন, রাশিয়ার হয়ে আরও অনেক চীনা নাগরিক সেখানে যুদ্ধ করছে। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

তবে চীন সরকার সরাসরি তাদের নাগরিকদের এই যুদ্ধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তারা তাদের নাগরিকদের এই যুদ্ধে অংশ না নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কাজ করছে।

যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা চীনা নাগরিকদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছে সিএনএন। তাদের একজন, যিনি ‘মাইকেল’ নামে পরিচিত, জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন, কারণ তিনি বিদেশে সামরিক জীবন কেমন, তা জানতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতায় তিনি হতাশ। তিনি অভিযোগ করেন, রুশ সেনাবাহিনীতে সরঞ্জাম এবং উপযুক্ত সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। এমনকি সৈন্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়।

তিনি এখন চান, অন্য চীনা নাগরিকরা যেন এই যুদ্ধে যোগ না দেন। তার মতে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী একটি ‘তামাশা’।

আরেকজন চীনা নাগরিক, যিনি আগে চীনের সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন, তিনিও সিএনএনকে জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন মূলত অর্থের জন্য।

তার ভাষায়, ‘টাকা না থাকলে সম্মান নেই’। তিনি আরও জানান, রাশিয়া থেকে তিনি মাসে প্রায় ২,৪০০ ডলার বেতন পান, যা তার দেশের চেয়ে তিনগুণ বেশি।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করা চীনা নাগরিকদের অনেকেই বলছেন, তারা আদর্শগত কারণে এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন।

তাদের একজন জেসন, যিনি আগে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতেন, বলেছেন, তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। তার মতে, চীনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত।

তবে, যুদ্ধের ময়দানের অভিজ্ঞতা সবার জন্যই কঠিন। উভয় পক্ষের চীনা যোদ্ধারাই যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং কষ্টের কথা জানিয়েছেন।

যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকা যে কত কঠিন, তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে, চীনের সরকার তাদের নাগরিকদের রাশিয়া বা ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকার জন্য চেষ্টা করছে।

তবে, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এখনো রাশিয়ার পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা অনেক চীনা নাগরিককে এই যুদ্ধে যোগ দিতে উৎসাহিত করছে।

সম্প্রতি, ইউক্রেন সরকার যখন তাদের আটক করা চীনা নাগরিকদের বিষয়টি সামনে আনে, তখন চীন সরকার তাদের দেশের নাগরিকদের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সরকার একদিকে যেমন তাদের নাগরিকদের নিরাপদে রাখতে চাইছে, তেমনি রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কও বজায় রাখতে চাইছে।

তাই এই মুহূর্তে তারা একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এতে চীনের নাগরিকদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন একটি মাত্রা যোগ করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *